ফিচার ডেস্ক : দেশে ক্রমশই বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। কারণ, এ রোগে এখন শুধু বয়স্করা নন, আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরাও। এর ফলে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। তাই ডায়াবেটিসের সমস্যায় আগেই যেমন রাশ টানতে হবে জীবনযাত্রায়, তেমনই খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে পরিবর্তন।
এ ক্ষেত্রে সুখবর হলো, স্বাস্থ্যকর সবজি করলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দুই থেকে তিনটি করলার বীজ ফেলে দিয়ে রস বের করে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলেই কেল্লাফতে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডায়াবেটিসের মহৌষধ এই করলা। বিশেস করে, টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন যারা, তাদের জন্য তো বটে, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসদের জন্যও উপকারী করলার রস। করলা স্বাদে তেতো হলেও এই সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
করলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংকসহ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। সে কারণেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলার জুস একাই একশো। উপমহাদেশ ও চীনের গ্রামাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে করলার রস খেয়ে আসছেন।
এ ছাড়া বাত রোগে, লিভার ও শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পেতেও করলা ভালো পথ্য। নিয়মিত করলা খেলে জ্বর, হাম ও বসন্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
করলায় কয়েকটি সক্রিয় পদার্থ আছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো চারেন্টিন। এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। করলায় আরও আছে পলিপেপটাইড-পি বা পি-ইনসুলিন নামক একটি যৌগ, যা প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস ছাড়াও করলা আরও কয়েকটি জটিল রোগ নিরাময়ে মহৌষদের কাজ করে। চলুন জেনে আসি সেগুলো সম্পর্কে।
প্রস্টেট ক্যানসার রোধ করে
করলা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জি ও যেকোনো রোগের সংক্রমণ রোধ করে। এটি ক্যানসার কোষের বিস্তার রোধ করে। নিয়মিত করলা খেলে স্তন ক্যানসার, কোলন ক্যানসার এবং প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
হজমের জন্য ভালো
খাবার হজম করতে সহায়ক এবং হজম শক্তিবর্ধক এই সবজি। তবে শুধু হজমশক্তিই নয়, করলা ফাইবারে পূর্ণ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
হার্ট ভালো রাখে
করলার তিক্ত রস এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদরোগের সম্ভবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, করলার রস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
ক্যালরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় করলা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এটি অ্যাডিপোজ কোষ, যা দেহে ফ্যাট সংরক্ষণ করে তার গঠন এবং বৃদ্ধি বন্ধ করে। এটি পরিপাক ক্রিয়া উন্নতি করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো শরীরকে ডিটক্সাইয়েটে সহায়তা করে, যাতে চর্বি হ্রাস করতে পারে।
ক্ষত নিরাময়ে করলা
করলার দুর্দান্ত একটি বৈশিষ্ট্য এটি। কোনো স্থানে ক্ষত হলে করলার ব্যবহার তৎক্ষণাৎ ওই স্থানের রক্তপ্রবাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ক্ষতের দ্রুত নিরাময় হয়।
রক্ত পরিশোধক
করলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দেহে শক্তি জোগায়
নিয়মিত করলা সেবনে দেহে শক্তির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
চোখের সমস্যা
করলা ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। এটি ছানি প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তিশালী করে।
শক্তিবর্ধক
করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
এছাড়া করলা অনিদ্রার মতো সমস্যা হ্রাস করে। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য সমস্যাও কমাতে সহায়ক এই সবজি। আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে বাড়িয়ে তুলে শরীরকে রোগে সংক্রমিত হওয়া থেকে সুরক্ষা প্রদান করে করলা। যারা তিতা খেতে পছন্দ করেন তাদের কাছে খুবই প্রিয় একটি সবজি।