ফিচার ডেস্ক : শীতে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে সতর্কতার পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উপাদানেও নির্ভর করতে হয়। শীতে সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে শরীরের নানা ব্যথা-বেদনা সবকিছুতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সুপারফুড আদা।
প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর আদা। গলাব্যথা হলে চায়ে আদা থেঁতে দিতে পারেন। দ্রুত উপকার পাবেন। আবার কাশি হলে এক টুকরো আদা মুখে রাখতে পারেন। কাশির সিরাপ খাওয়ার দরকার পড়বে না।
প্রাচীনকাল থেকেই আদা ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রান্নাঘরের সহজলভ্য একটি উপাদান এবং সুস্বাদু খাবারের মসলা হিসেবেও এর জুড়ি নেই। আয়ুর্বেদিক ভেষজ আদা। আদার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপারের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি শক্তি, ফাইবার, প্রোটিনের মতো অনেক পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও আদা হলো ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস।
আদা শরীরের আরও অনেক সমস্যার চটজলদি সমাধান করে। সেগুলো জানা থাকলে আদা ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। শীতে শরীর উষ্ণ ও সুস্থ রাখতে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখতে পারেন সুপারফুড আদা। তাই আর দেরি না করে জেনে নিন এই মশলার জাদুকরী কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ঠাণ্ডা, কাশি ও ফ্লু দূরে রাখে
অতি প্রাচীনকাল থেকেই ঠাণ্ডা, কাশি ও ফ্লু-র ওষুধ হিসেবে আদার রস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঠাণ্ডা বা কাশির সমস্যা সমাধানে আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ১০ সেকেন্ড গরম করে খান। শিঘগিরই সেরে উঠবেন।
পেটে ব্যথা কমায়
পেটে ব্যথা হলে আদা চা খেতে পারেন। আদাতে রয়েছে বেদনানাশক উপাদান যা সহজেই তাৎক্ষণিকভাবে পেটে ব্যথা কমায় ও আরাম দেয়।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
আদার রস শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যামিনো এসিড। প্রতিদিন আদার রস বা আদা চা খেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ঠিক থাকে ও হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আদার রস ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না, ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বাতের ব্যথা কমায়
জয়েন্টে বাতের ব্যথা কমাতে আদা খুব ভালো কাজ করে। আদার প্রদাহ ও ব্যথানাশক উপাদান বাতের ব্যথা খুব সহজেই নিরাময় করে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আদা চা খান, পানিতে আদা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে স্নান সেরে নিন, আরাম পাবেন। এখন বাজারে আদার তেলও পাওয়া যায়। ব্যথাস্থানে সেই তেল ম্যাসাজ করলেও আরাম পাবেন।
হজমে সহায়তা করে
ভারি খাবার খাওয়ার পর খানিকটা আদা চিবিয়ে খান। দেখবেন পেটের অস্বস্তিভাব কেটে যাবে। আদার রস খাদ্যের ভেতরকার পুষ্টিকে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পাকস্থলিতে এক প্রকার শ্লেষ্মা তৈরি করে যা আলসার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করে।
বমিভাব দূর করে
দূরের যাত্রাপথে বমিভাব হলে আদা খেতে পারেন। ব্যাগে আদা ছোট ছোট করে কেটে রাখুন। পুদিনা পাতা ও খানিকটা আদা চিবিয়ে খান। বমিভাব কেটে যাবে। এছাড়াও বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে মধু দিয়ে আদা চা খেয়ে বের হলে ভালো অনুভব করবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আদা শরীরের জীবাণু ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন খাওয়ার সময় দুই টুকরো আদা খান। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে আসবে ও অসুখ-বিসুখ হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে অনেকাংশেই।
মুখ পরিষ্কার করে
আদায় রয়েছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান যা মুখের ভেতরে জীবাণুকে মেরে ফেলে ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
সংক্রামণ রোগ বিনাশ করে
আদাতে রয়েছে এন্টি-ফাংগাল ও এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শরীরের বাইরের অংশের ঘা ও সংক্রামণ রোগের বিনাশ করে।
ক্যানসার নিরাময়ক
এতে রয়েছে এন্টি-ক্যান্সার প্রপার্টিজ। আদার উচ্চমানের এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সারের সেল তৈরি হতে দেয় না। অনেক সময় শরীরে ক্যান্সারের সেল তৈরি হলেও তা ছড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করে
আদার রস রক্তনালীর প্রদাহ দমন করে। মাইগ্রেনের কারণে মাথাব্যথা হলে আদা পেস্ট করে কপালে লাগাতে পারেন। ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যাবে।
ঋতুস্রাব চক্র ঠিক থাকে
যাদের ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে ব্যাথা হয়, তারা আদা সেদ্ধ পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে পেটে সেঁক দিতে পারেন। এসময় আদা চায়ে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে করে মাসিক চক্র ঠিক থাকবে।
ওজন কমায়
খিদে নিয়ন্ত্রণে আদার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রোজ সকালে আদা কুচি লবণ মাখিয়ে খেলে অকারণ খিদে পাওয়া কমবে। গরম পানিতে আদা কুচি বা থেঁতো করা আদা ফুটিয়ে খেলেও একই উপকার মিলবে। একই সঙ্গে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে না।
ত্বক-চুল ঝলমলে করে
আদার মধ্যে আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর ভিটামিন, যা শরীরকে নির্বিষ করে। একই সঙ্গে দেখভাল করে চুল-ত্বকেরও। তাই নিয়মিত আদা ফোটানো পানি গরম বা ঈষদুষ্ণ পানি পান করলে নিদাগ ত্বক আর কোমর ছাপানো চুল অনায়াসেই মিলবে।
কমে কোলেস্টেরল
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে আদা। এই পাঁচ সমাধান ছাড়া আরও অনেক রোগের উপশমে সাহায্য করে ঘরের নিত্যপণ্য আদা। সুস্থ থাকতে আদা-পানি ছাড়াও আদা চা, আদার জ্যাম, আদার স্মুদি বা স্যুপও খেতে পারেন।
বয়সের ছাপ দূর করে
কাজের চাপ, চিন্তা, ব্যস্ততা এসবের জন্য অল্পবয়সেই মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে থাকে। অনেক কিছু মেখে হয়তো বাইরে থেকে সাময়িক ফল পেতে পারেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান কিছু হবে না। এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা আদা ব্যবহার করতে পারেন। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান টক্সিন বের করে দেয়। মুখে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ায়। প্রতিদিন সকালে খানিক কাঁচা আদা মুখে নিয়ে চিবিয়ে নিন। বয়সের ছাপ দূর হবে।
শ্বেতি রোগ দূর করে
শ্বেতি রোগ নিয়ে আমাদের অনেক বাছ-বিচার আছে। এই রোগ হলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, তা অনেক সময় সামাজিক অসম্মানের কারণও হয়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি কাঁচা আদা খুব সুন্দরভাবে এই শ্বেতীকে কমিয়ে আনতে পারে। কাঁচা আদা মুখে বা আক্রান্ত স্থানে লাগান। এছাড়া আদা বাটাও মাখিয়ে রাখতে পারেন। কয়েক সপ্তাহেই উপকার পাবেন।
পোড়া দাগ দূর করে
আপনার ত্বকে যেকোনো দাগই থাকুক না কেন, তা যদি রোদে পোড়া কালো দাগই হয়ে থাকে, তার থেকেও আদা আপনাকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন সকালে আদার রস খালি পেটে পান করুন। এছাড়া কাঁচা আদাও আপনি পোড়া জায়গায় ঘষতে পারেন। ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ফল পাবেন।
মানসিক চাপ কমায়
মানসিক চাপ দূর করেতে সহায়তা করে আদা-চা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, চা পাতা ও আদার ঘ্রাণ মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। এই হাল্কা ঝাঁজ যুক্ত চা আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে বেশ কার্যকর। কিছুটা আদা ছিলে কুচি করে নিন। দুই কাপ পানিতে আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর মধু মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন মানসিক চাপ একেবারে কমে যাবে।