যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি রেলক্রসিংয়ে গতকাল রোববার সকালে ট্রেনের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে দুজন মারা গেছে। এই দুর্ঘটনায় গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার সময় দায়িত্বরত গেটম্যান ঘুমিয়ে ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হবে।
যশোরের দুর্ঘটনার পরের দিন সোমবার ময়মনসিংহে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে মালবাহী একটি ট্রাকের সঙ্গে কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। সেই ঘটনায় মারা গেছে চার জন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
রেলপথে যত দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে তার বড় একটি অংশই হয় রেলক্রসিংয়ে। এ ধরনের দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন ওঠে যে, এর দায় কার। সংশ্লিষ্ট পরিবহনের ড্রাইভার-হেল্পারে দায় কতটা, আর রেলগেটে দায়িত্বরতদের ভূমিকা কী সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার ঘটনা আগেও ঘটেছে। গেটম্যানদের দায়িত্বহীনতা বা অরক্ষিত রেলক্রসিং রেল দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, তার ৮৯ শতাংশই ঘটে অরক্ষিত ক্রসিংয়ে। এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে ১৭৫ জন রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪৫ জন।
রেলক্রসিংয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রেল কর্তৃপক্ষ কখনো কোন দায়ভার নেয় না। এটি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীন করে তুলছে কিনা সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। জননিরাপত্তার বিষয়টিকে এভাবে বছরের পর বছর উপেক্ষা করা চলে কিনা সেটা আমরা জানতে চাই।
অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে যেমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, তেমন পরিবহন চালক-হেল্পারদের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক চালকই ক্রসিংয়ের সামনে বসে ট্রেন চলে যাওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। সংকেত পাওয়ার পরও বা গেটম্যানকে ব্যারিয়ার নামাতে দেখেও অনেকে তড়িঘড়ি করে ক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করেন।
যশোর ও ময়মনসিংহে রেল দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা আমাদের আশা। শহর বা নগরের মধ্যে যেসব স্থানে রেলক্রসিং আছে সেসব স্থানে ওভারপাস নির্মাণ করা যায় কিনা সেটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে জরুরিভিত্তিতে ওভারপাস তৈরি করা জরুরি। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না, যানজটও কমবে।