নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে সড়কপথে সারাদেশে ছোট-বড় ৩৩ হাজার ৪৬৫টি দুর্ঘটনায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।
রবিবার এমন তথ্য দিয়েছে ‘সেভ দ্য রোড’। এদিন রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি এই সংস্থা তাদের বাৎসরিক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে দেশে ৩৩ হাজার ৪৬৫টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯২ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৪৯ হাজার ৯৯ জন।
একই সময়ে নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯০৫টি। এতে আহত ১ হাজার ৩১৪ ও নিহতের সংখ্যা ১৯৬। এছাড়া রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ১৯৬ টি। এতে আহত হয়েছে ১ হাজার ৫৯ ও নিহত হয়েছে ২৫৭ জন। এরমধ্যে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সংগঠনের মহাসচিব শান্তা ফারজানার প্রতিবেদনের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫২টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮১৪ জন, নিহত ৯০৪ জন। ৯ হাজার ৮৬৭টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ১০ হাজার ৮৩৪ এবং নিহত ৯৩৪ জন।
‘সেভ দ্য রোড’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্ধারিত গতিসীমা না মানা, পরিবহন মালিকদের উদাসীনতা ও সতর্কতা অবলম্বন না করা, বিশ্রাম ছাড়া ১২-২০ ঘণ্টা গাড়ি চালানোয় ১১ হাজার ৩৪৬টি বাস দুর্ঘটনায় আহত ১৩ হাজার ১৮৫ এবং নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২৪৩ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দায়িত্বে অবহেলা, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য ৩ চাকার বিভিন্ন ধরনের বাহনে ১১ হাজার ১০৪টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৭০৮ এবং নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৫১১ জন।
সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায় ও জিয়াউর রহমান জিয়া, আইয়ুব রানা, লায়ন ইমাম হোসেন-এর তত্ত্বাবধায়নে ২২টি জাতীয় দৈনিক, ২০টিভি-চ্যানেল, ৮৮টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক ও সহযোগী না থাকায় সড়কপথে প্রাণহানি ঘটেই চলছে। রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র গণপরিবহন সংকট, অন্যদিকে ফিটনেসবিহীন-ত্রুটিপূর্ণ বাস-টেম্পোর অবাধ চলাচলের কারণেও যাচ্ছে প্রাণ। এমন পরিস্থিতির উত্তরণে সেভ দ্য রোড মাত্র ৭টি দাবি নিয়ে এগিয়ে চলছে।
দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে- মিরেরসরাইতে নিহত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে স্মরণীয় করে রাখতে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। দুই. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা, সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেসবিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া চালক-সহযোগী নিয়োগ ও হেলপার দ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিন. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং হতাহতদের ইন্স্যুরেন্স স্কিমের ব্যবস্থা করতে হবে। চার. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাঁচ. সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিতকরণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ছয়. সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। সাত. আকাশ-সড়কপথ- নৌ ও রেলপথে চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ রাজধানীতে পাবলিক বাস বৃদ্ধি এবং যাত্রী হয়রানী-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন এবং শুধু চালক নয়; আমাদের পথচারী ও যাত্রীদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।