সকলের সংবাদ : আজ ২৮শে ডিসেম্বর এই সময়ের নান্দনিক কবি, ঢাকা টাইমস-এর নিয়মিত কলাম লেখক ও সাংবাদিক ফকির ইলিয়াসের জন্মদিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।
কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও বিভিন্ন ডেইলি পত্রিকায় ফকির ইলিয়াস নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। শক্তিমান এ লেখকের লেখায় উঠে আসে সমকালীন বাংলাদেশ ও বিশে^র তাবৎ দ্রোহের বিস্তৃত উপাখ্যান। তিনি লেখেন- ‘তুমি যদি বোমামুক্ত পৃথিবী চাও, তবে প্রথমেই চাইতে হবে সকল পরমাণুর বিনাশ। চাইতে হবে, এই মৃত্তিকায় কোনো জীবাণু থাকবে না। থাকবে না উঁচু কোনো পাহাড়। অথবা ঢালু কোনো নদী। কারণ উঁচু-নীচুর যে বৈষম্য, মূলত সেটাই বোমা-প্রকল্পের জন্ম দেয়। কিছু প্রাণসংহার করে। কিছু বৃক্ষকে পঙ্গু করে দেয় বিশ্বের দেশে দেশে।’
প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গ্রন্থসমালোচক, সাংবাদিক হিসেবে তার রয়েছে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি। প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ও বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি লালন ও চর্চায় তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ- ‘বঙ্গবন্ধুর জ্যোতিরেখায় শেখ হাসিনা’ ২০২৩-এর ঢাকা একুশে বইমেলায় ছিল একটি আলোচিত গ্রন্থ।
এছাড়াও ‘মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার’ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস ‘মেঘাহত চন্দ্রের প্রকার’- গ্রন্থ দুটিতে তিনি দক্ষতার সাথে বর্ণনা করেছেন বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের চাওয়া-পাওয়া। কবি ফকির ইলিয়াসের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’-য় স্থান পেয়েছে বেশ কিছু অসাধারণ ও কালজয়ী কবিতা- যা শুধু সমকাল নয়; সমকালকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকবে বহুদিন মানুষের প্রাণে। তাঁর কবিতার দিকে দৃষ্টি ফেরালে আমরা জীবনবোধের এক গভীর ও তাৎপর্যমণ্ডিত অসীম জগৎ দেখতে পাই:
‘দেহ এবং শরীরের পার্থক্য নির্ণয় করতেই আমার
লেগেছে ষাট বছর! পৃথিবীর বুকে-
এই যে আয়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি; তা আসলেই
আমার কি না- তা জানতেই শেষ হয়ে গিয়েছে
আমার পাঠোৎসাহ। এখন যা পড়ি, কিংবা
যা পড়ার পরিকল্পনা করি, তার কিছুই আর
মনে থাকে না। স্মরণ করতে পারি না-
এর আগে বর্ষাকালে আমি যোগ দিয়েছি কি না
ঝড়বরণ উৎসবে!’
এমন অনেক আশ্চর্য ও চমৎকার পঙ্ক্তির জনক তিনি। মরমীধারার সহস্রাধিক গানের পদকর্তা হিসেবেও তিনি রেখেছেন উজ্জ্বলতার সাক্ষর। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো: কবিতার বিভাসূত্র (প্রবন্ধ- ২০০৯), চৈতন্যের চাষকথা (গল্প-২০১০), গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ (কবিতা-২০১১), ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম (কবিতা-২০১২), গৃহীত গ্রাফগদ্য (কবিতা-২০১৪), অনির্বাচিত কবিতা (কবিতা-২০১৫), সাহিত্যের শিল্পঋণ (প্রবন্ধ-২০১৬)। মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার (প্রবন্ধ-২০১৭) মেঘাহত চন্দ্রের প্রকার (উপন্যাস-২০১৭),শহীদ কাদরী’র দরবারের দ্যুতি (প্রবন্ধ-২০১৮) প্যারিস সিরিজ ও অন্যান্য কবিতা (কবিতা-২০১৮) নক্ষত্র বিক্রির রাতে (কবিতা-২০১৯) সম্মোহিত শব্দদাগ (প্রবন্ধ-২০১৯) গ্রহান্ধ ঘরের কাহিনি (কবিতা-২০১৯), ধানমণ্ডির ধ্বনিপুত্র (কবিতা- ২০২০) ইত্যাদি।
ফকির ইলিয়াস সপরিবারে স্থায়ীভাবে বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। কিন্তু তিনি বিদেশ-বিভুঁইয়ে অবস্থান করলেও তাঁর চৈতন্যজুড়ে সবসময় অবস্থান করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের মানুষ। প্রগতিশীল প্রণোদনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি দেখতে চান বাংলাদেশকে এক অপার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির আরও বেশি, আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন লেখক-কবি ফকির ইলিয়াস।