ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও বণিক বার্তা পত্রিকার যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে সপ্তম নন-ফিকশন বইমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার সকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনদিনব্যাপী এ মেলা চলবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ বইমেলায় আসার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন কি বই আসছে তা জানতে পারছেন। মেলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসেন, সবাই হয়তো বই কেনেন না। কিন্তু বই কিনুক আর না কিনুক তারা বইয়ের আশেপাশে থাকছেন। বই নিয়ে আলোচনা করছেন। বইমেলার পরিসর আরও বড় হোক সেটা আমরা চাই। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ নন-ফিকশন বইমেলার আয়োজন করায় তিনি বণিক বার্তাকে ধন্যবাদ জানান।
সূচনা বক্তব্যে বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, শুরুতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো নন-ফিকশন বই নিয়ে একটা বইমেলা করার। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের সাথে যৌথভাবে আয়োজন শুরু হয়। আমরা প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করলেও পরবর্তীতে পরিসর বড় করার পরিকল্পনা ছিলো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার মেলায় নতুন বই এসেছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এই বইয়মেলা চলে আসছে এবং শুরু থেকেই এ বইমেলার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ গর্বিত। জ্ঞানের চর্চায় বইয়ের পঠন-পাঠন, বিশেষত নন-ফিকশন বইয়ের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে নন-ফিকশন বইমেলা হচ্ছে। এটা প্রকাশকদের জন্য একটা সৌভাগ্যের বিষয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ এই বইমেলা করে দিচ্ছে। এরকম মেলার কথা আমরা এর আগে ভাবিনি। বণিক বার্তা এটা ভেবেছে। এজন্য বণিক বার্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, আমরা যারা কর্মক্ষেত্রে রয়েছি আমরা এটা ভীষণভাবে উপলব্ধি করি যে, আমাদের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও আর্থ সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীর জ্ঞান প্রয়োজন। আর এই নন ফিকশন বইমেলা শিক্ষার্থীদের এধরণের জ্ঞান অর্জনের একটি সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, নন-ফিকশন বইমেলা একটি দারুণ উদ্যোগ। যখন প্রথম রেডিও আসলো তখন মনে করা হয়েছিলো বই গুরুত্ব হারাবে। আবার যখন চলচ্চিত্র আসলো তখনও ভেবে নেয়া হয়েছিলো বই গুরুত্ব হারাবে। কিন্তু পরে দেখা গেলো রেডিও-টেলিভিশনে বই পড়ার কাজ হবে না। একটি জাতি গড়ার জন্য নন-ফিকশন বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনেক। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে জ্ঞান তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তারা চায় না ৩য় বিশ্বের দেশগুলোতে তা ছড়িতে দিতে। এজন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানের চর্চা করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও মুক্ত চিন্তার জন্য আরো উন্মুক্ত হবে। নন-ফিকশন বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশনার সমস্যা থাকে, লেখকদের সমস্যা থাকে, পাঠকদেরও সমস্যা। পাঠকরা অনেক সময় এই বইয়ের সন্ধান পান না, বিপননেরও একটা সমস্যা থাকে। আবার প্রকাশকরা সবসময় আশঙ্কায় থাকেন, এই বই কতটা বিক্রি হবে। এখানেই এই নন-ফিকশন মেলার গুরুত্ব। বিপনন এবং প্রচারের জন্য মেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার বাইরে এ ধরনের মেলাগুলোর আয়োজন করতে হবে। ঢাকার বাইরের অনেকেই জানেনই না, এ ধরনের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একটা সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্প্রসারণ করা সম্ভব ততক্ষণ, যতক্ষণ সেখানে প্রশ্ন করা সম্ভব, ভিন্নমতকে আনা সম্ভব, বিশ্লেষণ করা সম্ভব, বিতর্ক করা সম্ভব। একটাই বক্তব্য, একটা চিন্তা কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য অনুকুল নয়।
অনুষ্ঠানে বণিক বার্তা প্রকাশিত নতুন দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলো হলো আনু মুহাম্মদের ’চীন: পরাশক্তির বিবর্তন’ ও ’নির্বাচিত সিল্করুট’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেলা পরিদর্শন করেন অতথিরা।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে নন-ফিকশন বইমেলা প্রাঙ্গণ। এ বছর সর্বমোট ৪১ টি প্রকাশনা ও গবেষণা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে।
এছাড়া এ বছর প্রথমবারের মতো ‘নন-ফিকশন গ্রন্থ সম্মাননা’ পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে বইমেলা কর্তৃপক্ষ। মেলায় অংশ নেয়া প্রকাশকদের মনোনীত বই থেকে বিচারক প্যানেল ২০২৩ এর দুটি নন-ফিকশন বই নির্বাচিত করবেন। মেলার শেষদিন সমাপনী অনুষ্ঠানে জুরিদের নির্বাচিত দুটি বইকে ‘নন-ফিকশন গ্রন্থ সম্মাননা’ দেয়া হবে।