‘ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। পরিচালনা পর্ষদের ওপরও নানা ধরনের চাপ থাকে’
নতুন প্রজন্মের বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০২১ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীজুড়ে দেখা দিয়েছিল করোনা মহামারী। সারা দেশে ছিল লকডাউন। মহামারীর কারণে কয়েক মাস ব্যাংকটির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারিক মোর্শেদ ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে নিয়ে কথা বলেছেন সকলের সংবাদ’এর অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক রমজান আলীর সঙ্গে।
সকলের সংবাদ : নতুন ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম কেমন?
তারিক মোর্শেদ : গ্রাহকের হাতের মুঠোয় রয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সেবা। গ্রাহকরা যাতে ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পেতে পারে সেই জন্য অ্যাপ চালু রয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকের সেবা মিলছে দেশ ও দেশের বাইরে। এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই ব্যাংকের একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সব ধরনের লেনদেন করতে পারে। এছাড়া প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সেবার আওতায় আনতে ব্যাংকে চালু রয়েছে ২৩টি শাখা, ৩টি উপশাখা। এছাড়া বিকাশ ও নগদ এবং রকেটের মাধ্যমে রয়েছে লেনদেনের সবাই সুবিধা।
সকলের সংবাদ : ব্যাংকের সুশাসন সম্পর্কে বলুন?
তারিক মোর্শেদ : ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। পরিচালনা পর্ষদের ওপরও নানা ধরনের চাপ থাকে। পরিচালকদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, এটিও সত্য। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার কোনো চাপ নেই। এখানে শত ভাগ সুশাসন রয়েছে। পরিচালকরা ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কাউকে কোন সুপারিশ করেন না। ব্যাংকের শুরু থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি।
সকলের সংবাদ : ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণের অবস্থা কেমন?
তারিক মোর্শেদ : নতুন ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকের ডলার ও আমানতের সংকট নেই। রপ্তানি ও প্রবাসীদের আয়ে যে ডলার আসে তাতে আমার গ্রাহকের এলসি খুলতে পারছি। তবে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করছি, যাতে কেউ ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানির নামে অর্থ পাচার করতে না পারে।
সকলের সংবাদ : কোন খাতে ঋণ বেশি দিতে আগ্রহ?
তারিক মোর্শেদ : শিল্প খাতে ঋণ দিচ্ছি, তবে পরিমাণে কম। বেশি জোর দিচ্ছি কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রথম ঋণ দেয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকে।
সকলের সংবাদ : আপনাদের ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
তারিক মোর্শেদ : আমানতকারীর অর্থ সঠিক খাতে বিনিয়োগ করা। গ্রামের মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রান্তিক লোকজনকে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা। আমরা চাই বেশি বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে। গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমাদের অবদান থাকবে। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য।
সকলের সংবাদ : ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
তারিক মোর্শেদ : ব্যাংকের আমানত বাড়াতে জোর দিচ্ছি। আমানতের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে কাজ করছি। ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়েও জোর থাকবে।
ব্যাংকের কোন খেলাপি ঋণ নেই। খেলাপি ঋণ যাতে না হয়, সেই দিকে বিশেষ নজর থাকবে। আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখা, ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে উপশাখাকে গুরুত্ব দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাই। আমরা বেশি উপ-শাখা করব। উপ-শাখার মাধ্যমে এসএমই ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেব। পাশাপাশি নন-ফান্ডেড এর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে।