নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার নীতি সুদহার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়।
নীতি সুদহার কী?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি (Repurchase Agreement বা Repurchase Option)। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।
নীতি সুদহার কীভাবে কাজ করে?
অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে। নীতি সুদহার বাড়ানো হয় মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। নীতি সুদহার বুঝতে হলে রিভার্স রেপো রেটের আলোচনাও সামনে চলে আসবে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য আছে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তারল্য তুলে নেয়। এ জন্যও একটি নির্দিষ্ট সুদের হার থাকে। অর্থ তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, তাকে বলা হয় রিভার্স রেপো। সাধারণত নীতি সুদহার বা রেপো রেটের তুলনায় রিভার্স রেপোর সুদহার কম থাকে।
নীতি সুদহারের সঙ্গে অর্থ সরবরাহের সম্পর্ক কী?
নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়। গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধির ফলে নীতি সুদহার এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। এই হারে তারল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেবে। ব্যাংক ঋণ কম নিলে মানুষও কম ঋণ পাবে। ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকবে। বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকলে জিনিসপত্রের দাম বেশি বাড়তে পারে না।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, স্বল্পমেয়াদী আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফার ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নীতি সুদহার বাড়ালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও এর সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতিরিক্ত সুদহার বৃদ্ধি অর্থনীতিতে ধীরগতি আনতে পারে, যার প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পড়ে।
অন্যদিকে, সুদহার কমানোর মাধ্যমে বিনিয়োগ এবং ব্যয় বৃদ্ধি সম্ভব। তবে এটি অত্যধিক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই, সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি বলেও করছেন বিশেষজ্ঞরা।