নিজস্ব প্রতিবেদক: পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজন সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বিত উদ্যোগ।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানের ইএমকে সেন্টারে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এক অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্যে এ তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার হলো মূলত মানসিকতার পরিবর্তন করা। আমরা যদি মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে পারি, তবে তারা কেবল নিজেরাই ক্ষমতায়িত হবে না, বরং আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই, মেয়েদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত এলাকাগুলোতে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে, সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, জাগো ফাউন্ডেশন সামাজিক পরিবর্তন এবং যুব উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
অ্যাডভোকেসি ডায়লগটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা দূর করতে সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করা। এছাড়াও, মেয়েদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
অ্যাডভোকেসি ডায়লগে “বাংলাদেশে জলবায়ু-প্রবণ অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষাগত বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে ক্ষমতায়ন – একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক ” শীর্ষক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড ও মার্কেটিংয়ের কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধুরী, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন এন্ড রির্সাসের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রচারণা চালানোর গুরুত্ব উঠে আসে। পাশাপাশি, মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়। মেয়েদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট-এর চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ বলেন, জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে শিক্ষা পৃথিবী পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন নয়, বরং সমগ্র সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, যা তাদের সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ করে দেয়। একসাথে কাজ করে আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে প্রতিটি শিশু, বিশেষ করে মেয়েরা, নির্ভয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
অদম্য (অপারেটিং ডাইভারসিফাইড অপরচুনিটিস ইন ম্যাস-মিটিগেশন অব অবস্ট্যাকলস অব গার্লস এডুকেশন) প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ভিত্তিক গার্লস ক্লাব গঠন, শিক্ষার্থীদের এসটিইএম, এসইএল, কমপিটেন্সি-বেইসড লার্নিংয়ে শিক্ষা সহায়তা এবং শিক্ষকদের জেন্ডারবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এছাড়াও, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, এবং স্যানিটারি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ওই এলাকার সাতটি ইউনিয়নে ১১২৮ টি পরিবার নিয়ে কাজ করছে। ফলে মাত্র ১৮ মাসে বিদ্যালয়ে কন্যা শিশুদের উপস্থিতির হার বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৫৬ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ৮০ শতাংশ মেয়েদের মধ্যে মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে।