ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ) সরকারি প্রতিষ্ঠান। ২০০৭ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সালে ২০০ কোটি টাকার প্রাথমিক তহবিল নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন চালু হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি শহর থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে জিডিপিডে ৩০ শতাংশের মতো অবদান রাখছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান এসএমই’র সার্বিক বিষয়ে নিয়ে কথা বলেছেন সকলের সংবাদ’এর অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক রমজান আলী।
সকলের সংবাদ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন কাজ কী ?
মো. মফিজুর রহমান: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে থাকে। ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, টিনসহ ব্যবসার যাবতীয় কাগজপত্রের সহযোগিতাসহ ঋণেরও ব্যবস্থা করে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদের। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্যের মান এবং পণ্যের মোড়কজাত আকষনীয়সহ ক্রেতাদের হাতে পৌছাবার পর্যন্ত সকল কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন। পণ্যের পরিচিতির জন্য দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে থাকি। এছাড়া আইসিটি-ভিত্তিক সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে এসএমই ব্যবসায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এসএমইগুলির জন্য পর্যাপ্ত মানবসম্পদ বিকাশের জন্য ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ সরবরাহ করা এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার কাজ করছে। আমরা ক্রেতা ও বিক্রিকর্মীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে দেই। যাতে ক্রেতা পণ্যে তৈরি করে বিক্রি করতে পারে। আর বিক্রিতা চাহিদা ও পছন্দমতো যাতে তাদের পণ্যগুলো কিনতে পারে। বিভিন্ন মেলার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে থাকি।
সকলের সংবাদ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের লক্ষ ও উদ্দেশ্য কী ?
মফিজুর রহমান: কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করাই মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিতে ভূমিকা রাখা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের স্বাবলম্বী করা। এছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় অর্থনীতির সকল উৎপাদনশীল ও সেবামুখী উদ্যোগের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা। সরকারি ও বেসরকারি খাতের এসএমই সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে।
সকলের সংবাদ : গ্রাহকের মাঝে ঋণ কিভাবে দিয়ে থাকেন ?
মফিজুর রহমান: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন সরাসরি গ্রাহকে ঋণ দেয় না। ১৭ ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ দেয়া থাকে। আমরা ঋণের আবেদন যাছাই-বাছাই করে আমাদের ১৭টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠায়। মূলত ব্যাংক থেকেই ঋণটা হয়। অর্থটা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন।
সকলের সংবাদ : ক্লাস্টার-ভিত্তিক ((গুচ্ছ বা দলভুক্ত) ঋণের ব্যাপরে কিছু বলুন ?
মফিজুর রহমান : ঋণ বা প্রশিক্ষনের জন্য বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি ক্লাস্টার-ভিত্তিক ((গুচ্ছ বা দলভুক্ত) সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের। কারণ এখানে এক সাথে অনেকেই প্রশিক্ষন দেয়া যায়। এদের ঋণ দিতেও সুবিধা বেশি। ফলে এসএমইএফের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল ক্লাস্টার-ভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন। ক্লাস্টারসমূহের মধ্যে রয়েছে- কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার, ডিজাইন ও সাজসজ্জা, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত শিল্প। অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে- প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক্স শিল্প, পর্যটন শিল্প, হোম টেক্সটাইল সামগ্রী, নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার), অটোমোবাইল প্রস্তুত ও মেরামতকারী শিল্প, তাঁত, হস্ত ও কারুশিল্প, বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি (এলইডি, সিএফ্ল বাল্ব উৎপাদন), ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প/ ইলেকট্রনিক ম্যারেটিরিয়াল উন্নয়ন শিল্প, জুয়েলরি শিল্প, খেলনা শিল্প, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ শিল্প, আগর শিল্প, আসবাবপত্র শিল্প, মোবাইল/কম্পিউটার/টেলিভিশন সার্ভিসিং খাত।
সকলের সংবাদ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনর গ্রাহক সংখ্যা কত ?
মফিজুর রহমান : বাজেট না পাওয়াতে তেমন বেশি কাজ করতে পারিনি। বাজেট পেলেও হইতো অনেক কাজ করতে পারতাম। নিজস্ব অর্থায়নে যা কিছু কাজ করছি। ১৭টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার উদ্যোক্তাকে সোয়া সাতশ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছি। এখন পর্যন্ত ৪২৮৩ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০ লাখেরও বেশি উদ্যোক্তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেবা প্রদান করেছি। সরাসরি সুবিধাভোগী ২,৪৬,৫৭২। এর পুরুষ ১,১০,৯৫৭ জন , নারী ১,৩৫,৬১৫ জন। সারা দেশের ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করছি। এছাড়া ১টি (রাজশাহীর কালুহাটি পাদুকা শিল্প) ক্লাস্টারে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে।
সকলের সংবাদ : পরিকল্পনা নিয়ে বলুন ?
মফিজুর রহমান : বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছে। সেই কাজ করেছি। ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত পৌছাতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অবদান বেশি দরকার। বর্তমানে জিডিপিতে ৩০ শতাংশের মতো অবদান রাখছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। । বর্তমানে ২৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এটাকে আরো কিভাবে বাড়ানো যায় সেই লক্ষে কাজ করছি। করোনার সময় সরকার ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছিল। সেই টাকা শতভাগ ঋণ দিয়েছিলাম। এখন প্রণোদনার যে অর্থ ফেরৎ আসছে সেটাই আবার ঋণ দিতে শুরু করেছি।
সকলের সংবাদ: চ্যালেঞ্জ গুলো বলুন?
মফিজুর রহমান : বড় কোন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারছি না। ছোট ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাজেট নেই। নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে আশানুরুপ কাজ করতে পারিনি।