অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছে বস্ত্রকল-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে পৃথক চিঠি দিয়ে তারা এ দাবি জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে অধিকাংশ সময় বস্ত্র কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় রপ্তানি খাতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, কারখানায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ও কাঁচামাল সংকটে বস্ত্র কারখানার মালিকরা কঠিন সময় পার করছেন। এর মধ্যে শ্রমিকদের গত জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের সময় এসে গেছে।
বিটিএমএর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে চলতি মাসের বেতন পরিশোধে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদহারে এক বছর মেয়াদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হলে কারখানাগুলোর পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তা না হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ায় ব্যত্যয় হতে পারে বলে মালিকদের আশঙ্কা।
জুলাই মাসের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে একই হারে (২%) এক বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকেরা উপকৃত হবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এটা প্রণোদনার আবেদন নয়; বরং তাঁরা ঋণ চাচ্ছেন এবং ধারাবাহিকভাবে এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করা হবে।
একই সঙ্গে চলমান ঋণের কিস্তি স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ। বিটিএমএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্রমাগত লোকসানে থাকা প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের পক্ষে এখন মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন। এ অবস্থায় সব মেয়াদি ঋণ আগামী ছয় মাসের জন্য সুদবিহীন করে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সরবরাহকৃত সুতা ও কাপড়ের বিপরীতে তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এলসি প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেসব বিল গ্রহণ করেছে, তা যথাসময়ে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়েছে। এই বিলের অর্থ পাওয়া গেলে সদস্য কারখানাগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় চলতি পুঁজির সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প চালু রাখাই বিটিএমএর মূল লক্ষ্য।
চিঠিতে বিকেএমইএ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসা বাণিজ্য সচল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্পের চাকা চলমান রাখাই আমাদের কাজ। এমনিতেই বিগত দিনগুলোতে কোভিড-উত্তর বিশ্ব বাজারের অর্থনৈতিক দুর্দশার সাথে রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি সংকট তৈরী করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাজারে সৃষ্টি হয় এক অস্থিরতা, কমতে থাকে আমাদের রপ্তানি ক্রয়াদেশ। এর সাথে যোগ হয় গ্যাস- বিদ্যুতের চরম সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ৫৬% মজুরী বৃদ্ধি, ব্যাংক কর্তৃক নানা রকম অসহযোগিতা ও সুদের হার বৃদ্ধি, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নানা রকম হয়রানি ও আমদানি-রপ্তানিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, দীর্ঘদিন চলমান নগদ সহায়তা গত ফেব্রুয়ারী ও জুলাই ২০২৪ থেকে দুই দফায় কমিয়ে দেওয়ায় (যা প্রকারস্তরে বন্ধ করে দেওয়ার ফলস্বরূপ) কমতে থাকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায় এ খাতের উদ্যোক্তাগণ।
চিঠিতে আরোও বলা হয়, যদিও গত ২ সপ্তাহের অনাকাংখিত সংকটকালীন সময়ে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার কোন অভাব ছিল না, তথাপি আমরা বেশ কিছু অনভিপ্রেত ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি গার্মেন্টস শিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।