নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেবল সামাজিক নিরাপত্তা জালের মধ্যে থাকলে চলবে না। এখন সামাজিক বিমা চালু করার সময় এসেছে। সরকারের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু দেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। অনেক দেশ ১০০ বছর আগে সামাজিক বিমা চালু করেছে। তারা এখন এই ব্যবস্থার সুফল ঘরে তুলছে। বাংলাদেশের উচিত সেই দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়া।
আজ বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও জিআইজেড আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পারভীন মাহমুদ।
মূল প্রবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামাজিক সুরক্ষা জালের অনেক ফাঁকফোকর আছে, যাঁদের সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার কথা, তাঁরা পান না। আবার যাঁদের পাওয়ার কথা নয়, তাঁরা পান। এই বাস্তবতায় সামাজিক বিমা করা চালু করা হলে এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করা সম্ভব হবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই সামাজিক বিমা আছে। কোথাও এই বিমা বাধ্যতামূলক, কোথাও আবার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। বাংলাদেশকে এসব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে। এখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে, তাদের একসূত্রে নিয়ে আসতে হবে।
দেশে এত দিনেও সামাজিক নিরাপত্তা বিমা না হওয়ার কারণে বিস্ময় প্রকাশ করেন আইএলওর ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান টেকনিক্যাল পরামর্শক সৈয়দ সাদ হোসেন গিলানি। এর জন্য তিনি আমলাতন্ত্রের ধীরগতিকে দায়ী করেন। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে আরও আট বছর আগে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের গতি খুবই কম। মূলত আমলাতন্ত্রের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ঘাটতিকে এর জন্য দায়ী করেন তিনি।
সৈয়দ সাদ হোসেন গিলানি বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ ভার সরকারের ওপর, এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও ব্যক্তির ভূমিকা নেই বললেই চলে। সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে অন্যদেরও এগিয়ে আসা দরকার বলে তিনি মনে করেন। সরকার, নিয়োগকর্তা ও কর্মী—এই তিন পক্ষকে একত্রে বসে ঠিক করতে হবে, সামাজিক বিমা রূপরেখা কেমন হবে। প্রয়োজনে আইএলও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
সামাজিক বিমা যেহেতু কর্মজীবী মানুষের জন্য, সেহেতু তিনি মনে করেন যে এই কাজের মূল দায়িত্বে থাকা উচিত শ্রম মন্ত্রণালয়ের। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশের চেয়ে ছোট জিডিপি ও কম মাথাপিছু আয় নিয়ে সামাজিক বিমা চালু করেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তার উদ্যোগ নেই।
অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে দেশের ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, দেশে ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্র বিমা নিয়ে বেশ কিছু কাজ হয়েছে, পাইলটভিত্তিক অনেক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়মিত ক্ষুদ্র বিমা পণ্যও আছে। এসব প্রকল্প ও কাজের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে বিনিময় করা দরকার, তাহলে সামাজিক বিমার কাজে গতি আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে পারভীন মাহমুদ বলেন, সামাজিক বিমা চালুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সবচেয়ে জরুরি। কোন মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে, তা ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে নলেজ ব্যাংক ও আইনি কাঠামো তৈরির পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা দেন জিআইজেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সিলভিয়া পপ।