নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে দেশ। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলো শীতে বেশি কাবু হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। ফলে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টে দিন পার করছেন। দিনের বেলায় সূর্য দেখা না যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে বহুগুণ।
পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত খবর:
পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ে আবারও কমেছে তাপমাত্রা। শুরু হয়েছে তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ। জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে জেলাজুড়ে। টানা ছয়দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। এর সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলাবাসী। গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ নিচের দিকে নামছে। গত কয়দিন থেকে চুয়াডাঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সূর্যের দেখা মিললেও উত্তাপ না থাকায় এবং উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে গোটা জনপদ, ফলে স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।
দিনাজপুর:
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে দিনাজপুর। গতকাল রবিবার এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
জেলায় সন্ধ্যার পর থেকে হিমেল হাওয়ায় তীব্রতা বাড়তে থাকে শীতের। এর সঙ্গে যোগ হয় ঘন কুয়াশা। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এ মাসে আরও একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
রংপুর:
হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় রংপুরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গেল তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। হাড়কাঁপানো শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ আরও পাঁচ রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। দগ্ধদের মধ্যে রংপুরের পীরগাছা এলাকার মোহাম্মদ (৬০) ও আলেয়া বেগম (৬৫) নামে দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহীন শাহ জানান, দগ্ধ হয়ে যেসব রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখানে রয়েছেন তাদের অধিকাংশ অসচেনতার কারণে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে ২-৪ জন করে আগুনে পোড়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদের বেশির ভাগ শিশু ও বৃদ্ধ।
তিনি আরও জানান, জনবল সংকট ও চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে এসব রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৪ শয্যার এই বিভাগে তিনগুণ রোগীর খাদ্য সরবরাহেও রয়েছে নানা সংকট।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে রংপুরের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি থাকায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই অবস্থা আগামীকাল পর্যন্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম:
তাপমাত্রা কিছুটা উঠানামা করলেও কুড়িগ্রামে কমেনি শীতের তীব্রতা। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। টানা পাঁচদিন দেখা মিলছে না সূর্যের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ২ সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। দিনের অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না সূর্যের তাপ। ফলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোপালগঞ্জ:
ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার দাপটে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে গোপালগঞ্জে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চরম বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা আরও করুন।
গতকাল রবিবার সকালে গোপালগঞ্জে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা জুড়ে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
পাবনা:
গত চারদিন ধরে পাবনা অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ অঞ্চলে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষকে। শীতের কারণে পাবনা শহর এবং বিভিন্ন রাস্তা ঘাটে কমে এসেছে মানুষের চলাচল।
গত ২ দিনে পাবনায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শীতবস্ত্র গায়ে দিয়েও নিবারণ করা যাচ্ছে না শীত। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ভোরে জেলা জুড়ে বৃষ্টির মতো পড়তে দেখা যায় কুয়াশা। তীব্র শীতের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার প্রভাবে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সেই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত।
গতকাল রবিবার সকাল থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা।
প্রচণ্ড শীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এমন আবহাওয়া আরও দু-একদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রবিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৪।