জেলা প্রতিনিধি, ফেনী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত নাম ফেনী। এক সময় বছরজুড়ে নানা নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হলেও এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। একটি উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ ফেনী-২ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮ জন প্রার্থী। তবে যারা নির্বাচনে লড়ছেন তাদের অনেককেই চেনেন না ভোটাররা।
ভোটে থাকলেও মাঠে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তারপরও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এদিকে এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের বেশিরভাগই যেমন রাজনীতির মাঠে নতুন তেমনি নির্বাচন ঘিরে নেই জনসম্পৃক্ততাও।
জানা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে বরাবরই স্বস্তিতে ছিল আওয়ামী লীগ। ফলাফল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ আসনে ১৯৭৯, ২০০১ ও ২০০৮ সাল ছাড়া অন্যান্যবার ভোটের মাঠে সফল আওয়ামী লীগ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীকে বিজয়ী করতে মরিয়া নেতাকর্মীরা। এ আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আলোচিত রাজনীতিবিদ প্রয়াত জয়নাল হাজারী। ২০০১ ও ২০০৮ সালে জয়লাভ করেন আরেক আলোচিত নেতা বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি। আওয়ামী লীগে জয়নাল হাজারীর অধ্যায় শেষে জেলার রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে হ্যাট্রিক করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসন থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
নিজাম উদ্দিন হাজারী চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্র থাকাকালীন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম থেকেই তিনি এইচএসসি এবং বি.কম. পাস করেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগরস্থ ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালের ২২ মার্চ তিনি প্রথম কারাগারে যান। তিনি ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির নির্বাচনে ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে তিনি ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
দলীয় নেতাদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘসময় ধরে ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ঘিরেই এ জনপদের আওয়ামী রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বের প্রশ্নেও আপস নেই নেতাকর্মীদের। এবারও নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে মুখিয়ে আছেন তারা।
ফেনী-২ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের বেশিরভাগই অপরিচিত। নিজাম হাজারী ছাড়া এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের মধ্যে জাপার প্রার্থী ছাড়া সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম নাম লিখিয়েছেন। ফলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আসনটিতে ফাঁকা মাঠেই নিজাম হাজারী গোল করবেন বলে ধারণা ভোটারদের।
এ আসনে তুলনামূলক আওয়ামী লীগের কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী খন্দকার নজরুল ইসলাম। নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় দেশের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ট্যাগ পাওয়া এ দল থেকে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নাম লিখিয়েছেন। আসনটির অন্য প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের দুই-এক সারি পোস্টার ঝুলানো থাকলেও নেই প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রম।
এবার এ আসনে ফেনী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী নৌকা প্রতীক, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আমজাদ হোসেন ভূঞা সোনালী আঁশ, জাতীয় পার্টির খন্দকার নজরুল ইসলাম লাঙল প্রতীক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা নুরুল ইসলাম মোমবাতি প্রতীক, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের নুরুল আমিন ভূঞা ছড়ি প্রতীক, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ হোসেন ডাব প্রতীক, খেলাফত আন্দোলনের আবুল হোসেন বটগাছ প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এএসএম আনোয়ারুল করিম ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটে থাকলেও মাঠে নেই। লাঙলের প্রার্থী ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্যদের কোথাও তেমন প্রচারণা দেখা যায়নি। দেখা যায়নি নির্বাচনী ক্যাম্পও। এমনটিই জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নৌকার টিকেট পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও নির্বাচনী ক্যাম্পে সরব রয়েছে আসনটি। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নৌকার বিজয় এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজাম হাজারী বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে সে ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার মানুষ নৌকা প্রতীকের পথসভায় যোগ দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে সকল ইউনিয়নে উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। ফেনী সদরবাসী নিজাম হাজারীর কাছে ঋণী। এ ঋণ শোধ করার সময় এসেছে।
স্থানীয় ভোটার মাজহারুল হক জিসান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হতে চললেও এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্যদের ভোটের মাঠেও খুব একটা দেখিনি। এখানে নিজাম হাজারী অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এ ব্যাপারে ফেনী-২ আসনের নৌকার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচিত হলে আমি শুধু আওয়ামী লীগের না, সব দলের এমপি হতে চাই। আমি কোনো স্কুলের ভবন, রাস্তাঘাট করলে সেখানে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ছেলেমেয়ে পড়বে না, আওয়ামী লীগের মানুষ হাঁটবে না। সে রাস্তায় সব দলের মানুষ হাঁটবে। আমি সব দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
এ আসনে লাঙলের প্রার্থী খোন্দকার নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণা কার্যক্রম চলছে। আশা করি সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে গেলে আমার পক্ষে রায় দেবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ফেনী-২ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৭২১ জন। এদের মাঝে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৮৫০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৭০ জন। অপরদিকে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ জন।