অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যা আগের একই বছরের তুলনায় ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বেশি। যা আগে এতো পরিচালন মুনাফা কখনো হয়নি ব্যাংকটির।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি । সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে যেসব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে তার মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ২০২৩ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। তার আগের বছর ২০২২ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, আামি যোগদান করার পরে, পূর্বের খেলাপি ঋণ আদায়ের বেশ জোর দিয়েছিলাম। এত নগদ আদায় বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি ব্যাংকের আয়ও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে ব্যাংক খাতের অনেক সমস্যা ছিল। বিশেষ করে ডলার সংকট ছিল। বিনিয়োগও তেমন বাড়েনি আবার বৈদেশিক বাণিজ্যও কম হয়েছে। তারপরও অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। কারণ হিসেবে বলছেন, ব্যাংকের সুশাসন ফিরে আসতে শুরু করেছে। আগে গ্রাহকরা ঋণ নিলে সহজে দিতে চাইতো না। এখন গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে তাদের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছে। ফলে ব্যাংকের মুনাফাও বাড়ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা; আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৯২৮ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭০০ কোটি টাকা; ২০২২ সালে ছিল ১০৬ কোটি টাকা। কৃষি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা; আগের বছর ছিল ৫৬১ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়নি। তাদের লোকসান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল) পরিচালন মুনাফা করেছে ৬০০ কোটি টাকা। আগের বছর করেছিল ৫২০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা; আগের বছর ছিল ১১৩৩ কোটি টাকা। ইষ্টার্ন ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। সাউথইষ্ট ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৯০০ কোটি টাকা। যা তার আগের বছর ছিলো ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মুনাফা ৪৫৫ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৪১৫ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক ২০২৩ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ২২২ কোটি টাকা। যা আগের বছর করেছিল ১৮৮ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা করেছে ৮৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিলো ৮১০ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ২ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৮৩০ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৫৫০ কোটি টাকা । যা আগের বছর ছিল ৫৪৫ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা করেছে ৫৪৫ কোটি টাকা । যা আগের বছর ছিল ৮৪৫ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবছর পরিচালন মুনাফা করেছে ৯০০ কোটি টাকা। এছাড়া উত্তরা ব্যাংক এবছর পরিচালন মুনাফা করেছে ৬৯৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর’২৩) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।
পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়; পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। এরপরই চূড়ান্ত হয় নিট বা প্রকৃত মুনাফা।