নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা আবারও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন হাত যখন দিয়েছি, তাদের আর ছাড় নেই, দুর্নীতিবাজদের ধরেই ছাড়বো।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। চীন সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন হাত যখন দিয়েছি, আমি ছাড়বো না৷ দুর্নীতিবাজ ধরছি বলেই, এখন সবাই জানতে পারছেন৷ আমার বাসায় কাজ করে গেছে, সেও এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলেই না৷ তার অপরাধ জানতে পেরেছি, পরে তাকে বের করে দিয়েছি, নিজের মতো ব্যবস্থা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আপন-পর জানি না, দুর্নীতি যেখানে হোক, যেই হোক, আমি তাকে ধরবো৷ জিরো টলারেন্স যখন বলেছি, তখন এটা করেই ছাড়বো৷
টিকা কেনার দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিন টেন্ডার ছাড়াই দ্রুত কিনতে হয়েছে, মানুষকে বাঁচিয়েছি৷ নিয়মনীতি দেখতে গেলে তখন মানুষ বাঁচাতে পারতাম না৷ টেন্ডারে কিনতে গেলে কতদিন লাগতো? এখন যদি কেউ সেখানে দুর্নীতি খুঁজতে যান, যেতে পারেন। তবে সাংবাদিকদের তথ্য খোঁজা এবং ফাইল চুরি কখনো এক বিষয় না৷
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছি বলেই, দুর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে৷ অনিয়ম-জঞ্জালগুলো পরিষ্কার করছি আমরা৷ এজন্য আমার ইমেজ নষ্ট হলে হোক, আমি তাদের ধরবোই৷ এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে, এখানে কোনো দ্বিধা নেই৷
সরকারপ্রধান বলেন, প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। দুর্নীতিবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেকে আমাকে বলেন, এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে, তাদের ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি আলোচিত ইস্যু প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা জিয়ার আমলে শুরু হয়েছে, আর খালেদা জিয়া এসে তো আরও একধাপ বেশি করেছে। তখন তো তালিকা আসতো। আর যা তালিকা তাই হতো। অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ ছিল না। করলে তারা বেঁচে থাকতে পারবে না। এই তো ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। সেটা ভুলে গেলে চলবে?
২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনিয়মের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, তারা যে অনিয়মগুলো করে রেখে গিয়েছিল, সেগুলো আবার সুস্থতায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। ২০১৮ সালের পর থেকে আবার এরা কিছুটা হাতে পেয়ে যায়। বহুদিন তাদের পেছনে লেগে থেকে থেকে এখনে ধরতে পেরেছি। যখন ধরা পড়েছে, এটার তদন্ত হবে, বিচার হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে, আর ঘুষ যে নেবে—উভয়েই অপরাধী। তিনি বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আর যারা কেনে, তারা দুজনেই অপরাধী। কিন্তু এটা বের করবে কে? সাংবাদিকরা চেষ্টা করে বের করে দিক, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারা আইন মানে না৷ সংবিধান চেনে না৷ সরকার কীভাবে চলে, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই৷ পড়ালেখা করে জিপিএ পায়, কিন্তু এসব নিয়ে কোনো ধারণা রাখে না তারা৷ আদালত তো রায় দিয়েছে, এখানে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই৷ এটি আন্দোলনকারীদের বুঝতে হবে৷ কোটা আন্দোলন এর পরেও চালিয়ে গেলে তারা চালাবে৷ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করলে আইন তার নিজ গতিতে বিষয়টিকে দেখবে৷