নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। গত কয়েকদিন ধরে দেশের তাপমাত্রা এতটাই বাড়ছে যে অনেকে এটি সহ্য করতে পারছেন না। ফলে হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে গরমের এই ভয়াবতার মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহে ঘাটতি। ফলে পানির অভাবে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মিরপুর, পল্লবী, পুরান ঢাকা, মুগদা, মান্ডা, লালবাগ, রায়েরবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পানি পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগীদের দাবি, বছরের এই সময়ে পানির সংকট প্রতি বছরের চিত্র। কিন্তু কখনো কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। অথচ ওয়াসার বক্তব্য, পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে।
মুগদা এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে পানি চলে যায়। সারাদিন পানি ছাড়া কীভাবে চলা যায়? মানুষের বাসা থেকে খাওয়ার পানিটুকু না হয় আনি, কিন্তু এর বাইরেও তো পানি লাগে। সেটা কোথা থেকে আনবো?’
পানি সংকটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় অসুস্থ রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের।
মালিবাগ এলাকার ষাটোর্ধ্ব আতিয়ার আলি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে পানির সরবরাহ কমে যায়। কিন্তু ওয়াসা সেদিকে দৃষ্টি দেয় না।’
এই এলাকার বাসিন্দা তারিকুল হোসেন বলেন, ‘তীব্র গরমে চিকিৎসকরা বেশি বেশি গোসলের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু পানির সংকটে একবারও ঠিকমতো গোসল করতে পারছি না।’
সংকটের বিষয়ে বাড্ডার বৌবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের অপারেটর মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে পানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মেশিন চালিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে কিছু কিছু এলাকায়। গরমে পানির চাহিদাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পানি সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে; মূলত সেই সব এলাকাতেই কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।’
ঢাকা ওয়াসা বলছে, প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তাদের। গরমকাল এলে রাজধানীতে পানির চাহিদা থাকে ২৬০ কোটি লিটার। সে হিসাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকার কথা না। তবে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতাই পানির বর্তমান সংকটের কারণ।
বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা।
বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করা পানি আসছে ভূগর্ভ থেকে।
প্রসঙ্গত, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনের কার্যক্রম তদারকির জন্য ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীতে পানির সমস্যা সমাধানে এসব টিম আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিং করবে।
ওয়াসার এই ১০ মনিটরিং টিম জোনভিত্তিক পাম্পগুলো নিয়মিত ও আকস্মিক পরিদর্শন করবে। পাম্প চালকরা যথানিয়মে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে টিমগুলো। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবে ঢাকা ওয়াসার এ কমিটি।
কিন্তু এই কমিটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, ‘প্রতি বছর একই সময়ে একইরকম সমস্যা হয়। সমস্যার সমাধান যদি না হয়, তাহলে এই কমিটির কাজ কী।’