নিজস্ব প্রতিবেদক: মালিকদের লুটপাটে বেসরকারি অনেকগুলো ব্যাংক ধ্বংসের মুখে। এগুলো ধ্বংস করতে সরকার ও প্রশাসন সহায়তা করছে। আর দুই অংশের মধ্য থেকে সংসদে ও মন্ত্রিসভায় তারা স্থান পাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে প্রফেসর রওনক জাহান ও প্রফেসর রেহমান সোবাহান সম্পাদিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ: ইকোনোমি, পলিটিকস, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বই নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন রাজনৈতিক এলিট শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক করে সুবিধা আদায় করেন। তারা নীতিমালার গতিমুখ পরিবর্তন করার সক্ষমতা অর্জন করেছেন। দেশের বেসরকারি ব্যাংকিং খাত ও গার্মেন্টস খাতের দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট। গার্মেন্টস মালিকরা একচেটিয়া সুবিধা পেয়েই যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর রওনক জাহান বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়েছে, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। উন্নয়ন ও কিংবা পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়েছে। গত ৫১ বছরে আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন হয়েছে। সেসব বিষয়ে বইয়ের লেখকরা ডাটা অ্যানালাইসি করে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বইটির বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় বলেন, বইতে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ আছে, যা বর্তমানে চলছে। গত কয়েক দশকে ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগের ক্ষমতা কমেছে। বর্তমানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই দুই অংশের মধ্য থেকে আমরা দেখেছি সংসদে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও মন্ত্রিসভায় স্থান পান।
বইটির প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ওই দুইটি গোষ্ঠী রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত প্রভাবশালী। দেশ রাজনৈতিক পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ করছে। অনেকে গ্রহণ করেন সামাজিক ধর্মীয় কৌশল। শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় প্রভাব বেড়েছে। বইটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকে বহু শাসকের সরকার হয়েছে। সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও রাজনৈতিক কারণে তারা বাদ পড়ে যান। তার মানে গণতন্ত্রের মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসক বা অনির্বাচিত শাসকদের শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
বইটির আলোচনায় তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল না থাকায় সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ দলাদলি ও কোন্দল আরও বাড়বে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘাত ঘটেছে দুই হাজার ৭১০টি, যার মধ্যে শাষক দল আওয়ামী লীগের ২৩৯ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০০ জনই নিহত হন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। বর্তমান সরকারের প্রভাবশালীরা পেশিশক্তি প্রয়োগ করছেন ভেতরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে। এমনকি রাষ্ট্রের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও সংঘাতে নেমেছেন। রাষ্ট্রেই একমাত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন না, বরং প্রভাবশালীদের বল প্রয়োগের অনুমতিও তারা দিচ্ছেন।
মতিউর রহমান বলেন, সকল শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধী দলকে সরকারি দল কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপির তথ্যানুসারে, গত বছরগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। শাসক দল বর্তমানে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। রাজনৈতিক দল আজ ভবিষ্যেতের পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়ে গেছে, বরং উল্টো পথে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, প্রথম প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলো মোটামুটি মোকাবিলা করা গেছে। আগামী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের চ্যালেঞ্জ তা মোকাবিলা করা, দ্বিতীয় প্রজন্ম কতটুকু প্রস্তুত? আমাদের হাইটেক খাতে রপ্তানি হয় মাত্র এক শতাংশ। যেখানে ভিয়েতনামে ৪৫ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, তবে শ্রম নির্ভর সক্ষমতা অর্জনে আমরা পিছিয়ে।
তিনি বলেন, নিম্ন আয় ও মধ্যম আযের দেশ হিসেবে ব্রাজিল ৩৫ বছর ধরে আটকে আছে। ফিলিপাইন ৩৩ বছর ধরে একই জায়গায় আটকে আছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি, দক্ষতা ও মানব সম্পদের উন্নয়ন প্রয়োজন।