নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীর ভালো না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর ভালো না। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখনও তারা চেষ্টা করছেন। ম্যাডাম এখনও সিসিইউতে।’
সোমবার দুপুর ২টায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে যান মির্জা ফখরুল। এ সময় তার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ছিলেন।
সাক্ষাতের পর সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। আলাপকালে তিনি জানান, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি অবস্থায় এখনও তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি দল বা পরিবার।
এক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার অনুমোদন মিলছে না, এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা কথাবার্তা বলছি। আমাদের চেষ্টা চলছে।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বেগম জিয়াকে দেখার পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে দেখতে যান। এভার কেয়ারে চিকিৎসাধীন এই নেতার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন তারা
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, সরকারের ওপর মহলের ক্রমাগত প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর স্বাভাবিক কোনও পথ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দল ও পরিবারে ন্যূনতম প্রত্যাশার জায়গাটিও নেই।
রবিবার (৩১ মার্চ) শেষ রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে এক মাসে দ্বিতীয়বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার মেডিক্যাল টিমের অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ম্যাডামের শারীরিক কন্ডিশন দেখে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখন তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আছেন।
কবে ফিরতে পারেন বাসায়, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। চিকিৎসাও চলছে।
গত ২৭ মার্চ রাতেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সেদিনও হাসপাতালে নেওয়ার কথা আলোচনা হলেও পরে নেওয়া হয়নি। পরদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, বিপজ্জনক অবস্থান থেকে খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকেরা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ এভার কেয়ারে ভর্তি হন তিনি। শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৪ মার্চ গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার অসুস্থতা বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। এরপর বেশ কয়েকবার হাসপাতালে যান। সবশেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য। তাদের চিকিৎসা শুরুর পরই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। সে যাত্রায় হাসপাতালে ১৫৬ দিন থেকে গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে কিছু দিন বিরতি দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে তাকে।
সবশেষ গত ফেব্রুয়ারির শুরুতেও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল তাকে।