নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংক আত্মীকরণ করে নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল এক্সিম ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণ করেছে। এখন পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘটনার পর অর্থনৈতিক মহলে এর প্রতিক্রিয়া কি হয় তা দেখার জন্য অনেকে অপেক্ষা করছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যে সমস্ত ব্যাংকগুলো দুর্বল সেসমস্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত হতেই হবে। এই একীভূত হওয়ার জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, এক ডজন ব্যাংককে একীভূত করার কাজ চলছে। এই ব্যাংকগুলোকে ডিসেম্বরের মধ্যে একীভূত হতেই হবে। যে সমস্ত ব্যাংক একীভূত হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সেগুলো হলো: বেসিক ব্যাংক, বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এসমস্ত ব্যাংকগুলো দুর্বল এবং এদের ঋণের বোঝা বেশি থাকার কারণে এ ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা বা আত্মীকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একীভূত হওয়ার আলোচনায় থাকা সরকারের মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে দুর্বল। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর এই কারণে এই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার একশ ৫০ কোটি টাকা। বেসিক ঋণ খেলাপির ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বেসিক ব্যাংককে সোনালী অথবা অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ কোন তথ্য বলেনি।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) গঠন করা হয়েছিল। তবে ব্যাংকটির আর্থিক সূচকের কোন উন্নতি হয়নি। তবে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের মোট ঋণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে আবার ৪২ শতাংশের বেশি খেলাপি। উল্লেখ্য, বিডিবিএল-কেও সোনালী বা অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। যে কোন সময় এ আলোচনার অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার পাঁচশ ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ২ হাজার সাতশ ৭২ কোটি টাকা। এরকম খারাপ অবস্থানে থাকা ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার আলোচনা চূড়ান্ত। এটি খুব শীঘ্রই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক এ দু’টি ব্যাংক দু’টি সবল বেসরকারি ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে প্রাইম ব্যাংকের একীভূত হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি।
এবি ব্যাংকেরও একটি ভালো বেসরকারি ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে ব্যাংক পাড়ায়। এছাড়াও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবং বিদেশী ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ইসলামী ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তবে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। সেজন্য শেষ পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলোর দায় নিয়ে একীভূত হওয়ার ঝুঁকি ইসলামী ব্যাংক নিবে কিনা সেটি নিয়েও কারও কারও মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।
এছাড়াও একীভূত হওয়ার গুঞ্জনে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক একটি শরীয়াহ ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে পারে বলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা গেছে। যে ১২টি ব্যাংককে এখন একীভূত করার গুঞ্জন চলছে, তার সবগুলোই দুর্বল এবং খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংগুলো প্রায় অচল অবস্থায় পড়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় সবল ব্যাংকগুলো এ ব্যাংকগুলোকে অধিগ্রহণ করলে এ ব্যাংকগুলোর উন্নতি হয় কিনা?