নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে ডলার সংকট। বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ধারবাহিকভাবে ডলার ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিনিয়ত কমছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতিতে বর্তমানে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষের দিকে রিজার্ভ আরও কমে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমেছিলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৪ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর তিন সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিলো ২ হাজার ১৭৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। চলতি মাসে তিন সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে ১৭২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারি রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৩ কোটি ১৫ লাখ ডলারে। তিন সপ্তাহ আগের যার পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৭৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। সেই হিসাব প্রকাশ করে না আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রাখতে হবে, তা-ও ঠিক করে দেয়। এর ফলে প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।
একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সাধারণত যে কোন দেশের কাছে ন্যূনতম রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারন করে। সংকটের প্রভাবে বিভিন্ন পণ্য আমাদনি ব্যহত হচ্ছিলো। এর পলে ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে মার্কিন ডলারের চাহিদা। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে। এর ফলে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার কোটি ডলারের ঘরে। একইসঙ্গে কমতে থাকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণ। এতে দেশের মধ্যে ডলারের সংকট আরও বেড়ে যায়। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিনিয়ত ডলারের দামে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত আসছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
ব্যাপকহারে ডলার সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলাস পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। বিভিন্ন উদ্যোগের পরেও ডলার বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি।
সদ্য সমাপ্ত বছর শেষে আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে সেই নথিপত্র অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। তবে বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। ডিসেম্বর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আগামী জুনের মধ্যে ২ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত বেঁধে দিয়েছে ঋণদাতা সংস্থাটি।