নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঈদুল ফিরতের টানা ছয় দিনের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। শবে কদরের ছুটি ও তার আগের সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১০ থেকে ১১দিন ছুটিও কাটিয়েছেন অনেকে। এবার যার যার কাজে ফেরার পালা। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে মানুষের ভিড় চোখে পড়ছে।
ছুটি শেষে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হয়েছে। ফলে কর্মস্থলে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ছুটে আসছেন কর্মমুখী মানুষ। বিশেষ করে নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় রেলপথে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এই স্টেশনে সকাল থেকেই ছিল যাত্রীর চাপ। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে সারা দেশ থেকে আন্তঃজেলা ও লোকাল মিলে ২০টি ট্রেন এসেছে। সবগুলো ট্রেনই ছিল যাত্রীতে ভরপুর। ট্রেনে করে ঢাকায় পৌঁছে অফিসে যোগ দিয়েছেন অনেকে।
পর্যটক এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রাম থেকে সকালে কমলাপুর আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাই আমার সময় কম। দ্রুত অফিসে ঢুকতে হবে। পরিবারকে গাড়িতে তুলে দিয়ে অফিসে করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বছর পর লম্বা ছুটি কাটিয়েছি। এর সঙ্গে পেয়েছি বৈশাখ। তাই বৈশাখ আনন্দ পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে করেছি।’
সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় সুন্দরবন এক্সপ্রেস। খুলনা থেকে ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় এ ট্রেনে। মালেক নামে এক এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে থাকতে কার না ভালো লাগে। আরও দুই দিন সময় পেলে আরও ভালো লাগতো। তাই সকালে এসে অফিস করছি।’
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী শিক্ষার্থী ফাহমিদা হামীম বলেন, ‘ আমাদের ক্যাম্পাস খোলা। কয়েকদিন পরেই পরীক্ষা শুরু হবে। তাই দ্রুত ঢাকা আসা।’
আরেক যাত্রী বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে ট্রেনে অনেক ভিড় হয়েছে। আমার শিডিউল বিপর্যয়ও হয়েছে। ১০টার ট্রেন সাড়ে ১১টার এসে পৌঁছায়।’
কমলাপুর রেলস্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবিবার পহেলা বৈশাখের দিন থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করে নগরবাসী। তবে আজ থেকে এর সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে অফিসগামীদের দেখা যায় ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছেন।’
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যস্ত হয়েছে স্বীকার করে স্টেশন মাস্টার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে দু-একটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যস্ত হয়েছে। তবে কোনও ট্রেন বাতিল করা হয়নি। অধিকাংশ ট্রেন সময়মতো ঢাকায় এসে পৌঁছায়।’
গতকাল দুপুরে গাবতলি বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় দূরপাল্লার প্রত্যেকটি বাসে করে ঈদে বাড়ি যাওয়া মানুষেরা ফিরছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বেশিরভাগ মানুষ সাভার, হেমায়েতপুর, আমিন বাজার নেমে যাচ্ছেন। বাকিরা গাবতলি টার্মিনালে নামছেন। ফেরা যাত্রীদের মাঝে দাফরিক চাকরিজীবীর তুলনায় শিক্ষার্থী ও সীমিত আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের সংখ্যা বেশি ছিল।
আগত যাত্রীরা জানান ঢাকায় ফিরতে রাস্তায় কোনও সমস্যা হয়নি। বড় কোনও যানজটও লাগেনি। নির্বিঘ্নে বাস চলায় যাত্রা স্বস্তির ছিল। তবে কিছু কিছু বাসে লোক দাঁড়িয়েও আসছেন।
গাবতলি বাস টার্মিনালের সামনে নেমেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে ইলেকট্রিশিয়ান আজিজুল। তিনি মানিকগঞ্জ থেকে এসেছেন। আজিজুল বলেন, ‘ফিরতি পথে বাসে মানুষ দাঁড়িয়েও এসেছে। পুরা বাস ভরা ছিল। বেশিরভাগ লোক সাভার নবীনগর নেমেছে। তবে রাস্তায় কোনও ঝামেলা ছিল না। তাড়াতাড়ি আসতে পারছি।’
গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরা শিক্ষার্থী শান্ত বলে, ‘কোনও সমস্যা হয় নাই রাস্তায়। গাড়ি টানা চলছিল। তবে আজ গরমটা বেশি।’
বাস থেকে নেমেই যাত্রীদের সিনএনসি অটোরিকশা নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছিলো। সিএনসি চালকরা নাগালের বাইরে ভাড়া চাচ্ছেন। কেউ মিটারে যাত্রী নিচ্ছেন না তারা। রোদের গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীরা বেশি কথা না বাড়িয়ে রাজি হয়ে যাচ্ছেন।
গাবতলি থেকে মাটিকাটা যাবেন মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এমনি যে গরম, গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসাটাই কঠিন। সিএনসি ভাড়া বেশি চাইলেও কথা বলার ইচ্ছে নাই। গরমে যত দ্রুত বাসায় যাওয়া যায়।’
এদিকে সকাল থেকেই অধিক মানুষ ঢাকায় ঢুকছেন জানিয়ে সিএনজিচালক জহির বলেন, ‘এই পর্যন্ত মহাখালী টার্মিনাল আর গাবতলিতে ছিলাম। ভালোই যাত্রী আসতে দেখলাম।’