বাণিজ্য ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চলমান সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা নিজেদের মধ্যে একান্ত বৈঠক করে আর্থিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা মনে করছেন, ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ও বিকল্প ঋণদাতারা প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে তাঁরা কঠোর আইনকানুন ও বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন, বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
দাভোস সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন বড় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন জে পি মরগান চেজের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন। নিজেদের মধ্যে বৈঠকে প্রধান নির্বাহীরা বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁরা মনে করছেন, নীতি সুদহারের পরিবর্তনশীল নীতিও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বৈঠকের আগে অন্তত একজন প্রধান নির্বাহী রয়টার্সকে বলেছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে চলতি বছর নীতি সুদহার কমলেও তার প্রভাব অতটা অনুভূত না–ও হতে পারে।
প্রধান নির্বাহীদের এই একান্ত বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বার্কলেসের প্রধান নির্বাহী সি এস ভেঙ্কটাকৃষ্ণান ও ম্যানুলাইফের প্রধান নির্বাহী রয় গোরি। তাঁরা মূলত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ঝুঁকি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
নীতিগত বিষয়টি এসেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে। ব্যাংকের পুঁজি সংরক্ষণের হার বৃদ্ধির বিষয়ে ফেডারেল রিজার্ভ যে খসড়া নীতিমালা করেছে, ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংকাররা তার শতভাগ সংস্কারের দাবি তুলেছেন। তাঁদের দাবি, এই নীতির কারণে অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
এদিকে আরেক বড় ব্যাংক সুইজারল্যান্ডের ইউবিএসের চেয়ারম্যান কোম কেলেহার বলেছেন, এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত ছায়া ব্যাংকগুলোর দিকে নজর দেওয়া, যারা ঠিক মূলধারার ব্যাংকগুলোর মতো নিয়ন্ত্রিত নয়। তিনি মনে করেন, পরবর্তী সংকট এরাই তৈরি করবে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ব্যাংক ধসে পড়ে। এসব ব্যাংকধসের ঘটনায় বোঝা যায়, ব্যাংক ধসে যাওয়া আর্থিক খাতের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়ির কারণে সেই ঝুঁকি অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি।
যুক্তরাষ্ট্রে বহুল প্রতীক্ষিত এক নীতি চলতি বছর চূড়ান্ত হওয়ার কথা। সেটা হলে গ্রাহকেরা আরও সহজে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিজেদের তথ্য বিনিময় করতে পারবে। এতে আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে।
প্রধান নির্বাহীদের একাংশ মনে করেন, যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বেশি কঠোর, এরপর ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।
এ বৈঠকের বিষয়ে জে পি মরগানের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি। এ ছাড়া বার্কলেস ও ম্যানুলাইফের কর্মকর্তাদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছাতে পারেনি রয়টার্স। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্রিটেনের প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইসিবির তত্ত্বাবধায়ক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যাংকের পুঁজি সংরক্ষণের হার বেশি হবে।