জেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, জাপা বুঝি না, ভালো মানুষ বুঝি কেবল। আমরা প্রেস ক্লাব, আইনজীবী, ইমাম সাহেব, পুরোহিত, ছাত্রছাত্রী সবাইকে নিয়ে মাদক- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে ‘প্রত্যাশা’ নামে একটি সংগঠন গড়বো। ভিক্ষা চাই আপনাদের পা ধরে, প্লিজ এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করুন। আমি আল্লাহর ঘরে বলে আসছি। জানি আমি মরে যাব। প্রতি রাতে তওবার নামাজ পড়ে শুই। সকালে যদি না উঠি।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ফতুল্লা নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে নির্বাচনোত্তর পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ লীগ ও অঙ্গসংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, দেশের মানুষকে না খাইয়ে মারার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমনও হতে পারে, টাকা দিয়েও আপনি জিনিস কিনতে পারছেন না। সামনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না, দেশের বিরুদ্ধে আরও অনেক গেইম হবে। ভৌগোলিকভাবে অনেক কিছু ঘটছে। অনেক বড় বড় শক্তি এর সাথে জড়িত। আমরা একটি ক্রাইসিস ওভারকাম করতে যাচ্ছি। যা আসবে, দেখা যাবে ইনশাআল্লাহ৷ কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের ভরসা আছে। মৃত্যুকে এক পয়সা দাম না দেওয়ার নাম শেখ হাসিনা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নাম শেখ হাসিনা। ২১ বার চেষ্টা করেও তাকে মারতে পারেনি। শয়তান কোনোদিন আল্লাহর রহমতের সাথে পারে না। আল্লাহ যেন দেশের জন্য, আমাদের বাচ্চাদের জন্য শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখেন।
নির্বাচনে ভোটপ্রদানে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, এমনিতেই ইলেকশনের আগে বোম্ব ব্লাস্ট করে, ককটেল ফাটিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হয়েছে। এমনকি ভোটকেন্দ্রে গেলে লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে মিছিল হয়েছে। আমার শ্বশুরবাড়িরই মাত্র দুইজন লোক ভোট দিতে গেছে। তারা ভয় পেয়েছে কেউ যদি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপরও কোনো সরকারি অফিসারের সাথেই ইলেকশনের ১০ দিন আগে থেকে কথা বলিনি। কেননা আমি চেয়েছিলাম ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করব। কিন্তু আমার ভোটের পার্সেন্টিজ যাতে কম হয়, সেজন্য অনেক কিছু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচনের দিন সকালে বাসায় দোয়া পড়ছিলাম। আমার ছেলে বিষয়টি আমাকে জানায়। কিছু জায়গায় পুলিশের লোকজন, কিছু জায়গায় জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্টের লোকেরা, কোথাও কোথাও এরা একত্রিত হয়েও এ রকম করেছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই। তারা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, মানুষ যার ডাকে সাড়া দেয় সেই নেতা। কোথায় আমরা কত ভোট পেয়েছি সেই হিসেব হচ্ছে। আমার তো কাউকে না কাউকে তৈরি করতে হবে। ৫ বছর পরে আমার এই ফর্ম থাকবে না। আগামীতে আমি আর নির্বাচন করবো না। আমি চলে যাওয়ার পর যাতে এখানে যেই দাঁড়াক সে যেন পাস করতে পারে। নির্বাচনে আমি তেমন কোনো টাকা খরচ করতে পারিনি। অনেক নেতাই নির্বাচনী খরচের টাকা ফেরত দিয়ে গেছেন। অনেককেই সেধেও একটি টাকাও দিতে পারিনি। অনেক মেম্বারও আমার নির্বাচনের চেয়ে চেয়ে বেশি খরচ করে। নেতাকর্মীদের জন্য আমার জান হাজির। খারাপ মানুষ আমার সাথে থাকলে আমি তাকে রাখব না। নেতাকর্মীদের ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। কর্মীরা টাকা-পয়সা চায় না। আজ থেকে আমার সাথে আপনাদের যোগাযোগ হবে ডাইরেক্ট। রাজনীতিকে আমি ধান্দা হিসেবে নিইনি। নিলে ২০২৩ সালে এসে বাড়িঘর বন্ধক রাখতে হতো না।
গ্যাস সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এখন খাদ্যের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা আমরা মনে করছি সামনে সারাবিশ্বে খাদ্য ও তেলের সংকট হবে। গ্যাসের সমস্যা শেষ হতে মার্চ মাস লেগে যাবে।
মাদকের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, আমি কারো কাছে এবারও ভোট চাইনি। প্রথমবার এমপি হয়ে আল্লাহর ঘরে গিয়ে ওয়াদা করেছিলাম পতিতাপল্লী উচ্ছেদের। ২০০ বছরের এই গজব আমরা নেত্রীর সহযোগিতায় উচ্ছেদ করি। নারায়ণগঞ্জের এমন কোনো এলাকা নাই যেখানে মাদক ব্যবসা নাই। এই মাদক থেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধগুলোর সৃষ্টি হয়। গতকালও মাসদাইরে একজনের মাথায় কিশোর গ্যাংয়ের কোপে ৪০টি সেলাই লেগেছে। জেলার ১৮০০ পুলিশ মাদক কন্ট্রোল করতে পারবে না। রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিকদের অনেকে মাদক বিক্রিতে জড়িত। মাদক যারা বেচে তারা হয়তো আমার সাথেই বসে আছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে আমাকে এক মাস কাজ করতে দিন। গোপনে মাদক ব্যবসায়ীদের নাম দেবেন আমার কাছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জে এক চিমটি মাদকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর মাদক ব্যবসায়ীদের বলছি, আমাকে আগের রূপে নিয়েন না। কারো পরিচিত কেউ মাদক ব্যবসা করলে তাকে ছেড়ে দিতে বলুন, নইলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িঘর বিক্রি করিয়ে ছাড়ব। এবার আমি মাদক ব্যবসায়ীদের গলায় পাড়া দেব। আর উকিলেরা মাদক ব্যবসায়ীদের মামলা নিয়েন না। আর মাদক ব্যবসায়ীদের যে জামিন দেবেন, তাকেও নারায়ণগঞ্জে থাকতে দেব না। মাদক ব্যবসায়ী আমার মামু, শালা, দুলাভাই হলেও ছাড়ব না। আপনার এলাকার ভালো মানুষগুলোকে নিয়ে আসবেন ২৭ তারিখ দুপুরে শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। সেখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহদাত হোসেন সাজনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।