নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত। ঋণ বিতরণ করলেও আদায় করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক বহির্ভূত ১০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের তালিকার মধ্যে রয়েছে, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স (আইআইডিএফসি), আভিভা ফাইন্যান্স, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স এবং প্রিমিয়ার লিজিং।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। আর্থিক পরিস্থিতিতে বেশ নাজুক প্রতিষ্ঠানটির অন্যদের তুলনায় আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ আদায়েও পিছিয়ে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। খেলাপিসহ অন্য ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাখতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৩৫৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি ৬৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।
প্রভিশন ঘাটতির দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এরপরেই রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রভিশন ঘাটতি ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এছাড়া প্রিমিয়ার লিজিংয়ের প্রভিশন ঘাটতি ১৪৭ কোটি, ফাস্ট ফাইন্যান্সের ১৩৪ কোটি, বে লিজিংয়ের ৯৩ কোটি, হজ্জ ফাইন্যান্সে ৬৮ কোটি, আইআইডিএফসি ৪৬ কোটি, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ২১ কোটি এবং মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের প্রভিশন ঘাটতি ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই দূরাবস্থা। প্রভিশন ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অশনি সংকেত। এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। এছাড়া নিম্নমানের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে আলাদা করে রাখতে হয় ১০০ শতাংশ অর্থ।
প্রভিশন ঘাটতি বলতে বোঝায় এসব প্রতিষ্ঠান থাকা নগদ অর্থের চেয়ে আর্থিক দায়বদ্ধতার পরিমাণ বেশি। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
এদিকে জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ছিল ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।