আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) কুকুরের মাংসের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে একটি বিল পাস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাংসের জন্য দেশটিতে কুকুরের প্রজনন, জবাই এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ। কুকরের মাংস খাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস, যেটিকে দেশটির জন্য বিব্রতকর বলে অভিহিত করেছেন অ্যাক্টিভিস্টারা। ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার রন্ধনপ্রণালীর একটি অংশ ছিল কুকুরের মাংস। অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, দেশটিতে বাণিজ্যের জন্য প্রতি বছর ১০ লাখ কুকুরকে হত্যা করা হয়। তবে সম্প্রতি কোরিয়ানরা পোষাপ্রাণীর মালিকানা গ্রহণ করায় এর ভক্ষণ তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার শহুরে তরুণদের মধ্যে কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এই অনুশীলনকে বেআইনি করার জন্যপশু অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের অধীনে, কুকুরের মাংস খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকারী সমর্থন বেড়েছে। তিনি একজন স্বঘোষিত পশুপ্রেমি। তিনি ফার্স্ট লেডি কিম কেওন-হি-এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাস্তার কুকুর এবং বিড়ালকে দত্তক নিয়েছেনা। তিনি নিজেই কুকুরের মাংস খাওয়ার একজন সোচ্চার সমালোচক।
শাসক ও প্রধান বিরোধী দল উভয় প্রস্তাবিত এই বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে ২০৮-০ ভোটে পাস হয়।
এটি ইউনের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর তিন বছর পর কার্যকর হবে।
আইন অনুসারে,মাংসের জন্য কুকুরের প্রজনন, বিক্রি এবং জবাই করলে তিন বছরের জেল বা ৩ কোটি ওয়ান জরিমানা হতে পারে।
বিলটির প্রস্তাবকারী ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির আইনপ্রণেতা থাই ইয়ং-হো বলেন, “এখন ‘কুকুর খাওয়ার দেশ’ হিসেবে সমালোচিত হওয়ার আর কোনও যৌক্তিকতা নেই।”
একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং সরকারকে এখন পশু অধিকার রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে হবে।’
সোমবার সিউল-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাওয়ারনেস, রিসার্চ, অ্যান্ড এডুকেশন প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জনই ভবিষ্যতে কুকুরের মাংস খাবেন না বলে জানিয়েছেন।
অ্যানিমেল লিবারেশন ওয়েভ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ বলেছে, মঙ্গলবারের ভোট বিশ্বব্যাপী একটি অগ্রণী সিদ্ধান্ত ছিল। এটি অন্যান্য প্রাণীদের অধিকার রক্ষার পথ প্রশস্ত করবে।
এদিকে, কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ করার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলো খাওয়ার জন্য কুকুর প্রজননকারী কৃষকদের কাছ থেকে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তবে নতুন আইনের অধীনে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় এক হাজার ১০০টি কুকুরের খামার প্রতি বছর কয়েক হাজার কুকুরের প্রজনন করে। সেগুলোর মাংস সারা দেশের রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয়।