নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে ধারণা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের। তবে তিনি বলেছেন, এটা নিশ্চিত নয়। প্রকৃত হিসাব এখন বলা যাবে না।
সিইসি আরও বলেন, ভোটের হারের এই হিসাবে কিছুটা ব্যত্যয় হতে পারে। সব গণনার পর ভোটের হার বাড়তেও পারে, বাড়তে নাও পারে।
এর আগে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভোটের হারের হিসাব দিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তখন তিনিও জানিয়েছিলেন, এই হিসাবে কিছুটা হেরফের হতে পারে। কারণ, সব জায়গার তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজ রোববার সকাল আটটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটে কোথাও কোথাও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। কোথাও কোথাও উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি ছিল। এদিন অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন অন্তত ২৮ প্রার্থী। তাঁদের মধ্য স্বতন্ত্রসহ অন্য দলের প্রার্থীরাও আছেন।
কিছু কিছু জায়গায় জাল ভোট, ভোট গ্রহণ শেষের আগেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে (ফলাফল বিবরণী) স্বাক্ষর নিয়ে দেওয়া এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৪০টি কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪২ জনকে।
নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। অন্তত ৯টি আসনে ২১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
ভোট গ্রহণ শেষে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় নির্বাচন কমিশনাররাসহ কমিশনের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন। কিছু কিছু জায়গায় ব্যালট নিয়ে সিল মারার চেষ্টা হয়েছে। কিছু কিছু বাক্সের ভেতর থেকে সিল মারা ব্যালট উদ্ঘাটন করা হয়েছে, সেখানে কিন্তু সিল নেই। গণনা থেকে এসব ব্যালট বাদ দেওয়া হবে।
সিইসি বলেন, তাঁরা খুব ভালো করেছেন, তা বলছেন না। তবে তাঁরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সরকারের সহায়তা ছিল, আন্তরিকতা ছিল। তাই সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তিনি জানান, ৯০ শতাংশের মতো কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পাঠানো হয়েছিল। বাকি দুর্গম কেন্দ্রে ব্যালট গেছে আগের দিন রাতে।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করায় সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন, আধা সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান সিইসি।
ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সিইসি বলেন, তাঁর কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না। তবে সবার কথা মোটামুটি মিলে গেলে জনগণ তাঁদের মনোভাব তৈরি করবেন।
দেশে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছিল। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে ৪০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছিল বলে হিসাব দিয়েছিল ইসি।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব বড় দল অংশ নেয়। তবে নির্বাচনটি নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। ইসির হিসাবে, ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশের কিছু বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না, সেটা তাঁরা বলবেন না। জনগণ কী বলে, গণমাধ্যমে কীভাবে উঠে আসে তার ওপর নির্ভর করে বলা যাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না।