ইসলাম ডেস্ক : সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন শুক্রবার, জুমার দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে আজানের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে নামাজের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ার। ওলামায়ে কেরামের মতে, জুমার আজানের পর সবপ্রকার কাজকর্ম, ব্যস্ততা পরিহার করা আবশ্যক।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার জোহরের ওয়াক্তে দুই রাকায়াত জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিনা ওজরে জুমা ছেড়ে দিলে ওই ব্যক্তি গুনাহগার হবেন। অর্থাৎ, জোহরের নামাজ আদায় করার পরও জুমা না পড়ার কারণে গুনাহগার হবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বোঝো। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও’। (সূরা জুমআ: আয়াত ৯-১০)।
জুমার দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। যেগুলো মুমিনদের জন্য বিশেষ ফজিলতের।
১. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে।
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ করে হয়ে হবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হচ্ছে যে, কবিরা গোনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না।
তবে যদি কেউ পুরো সুরা তেলাওয়াত করতে না পারে, তবে ন্যূনতম সুরাটির প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করায়ও রয়েছে এসব বিশেষ ফজিলত।
২. দুরুদ পড়া
আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐদিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’
লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কীভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে মাটির ওপর হারাম করে দিয়েছেন।’ আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১, নাসায়ী ১৩৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৬, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২।
৮০ বছর ইবাদাতের দুরুদ
যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এ দরুদ পড়বে- اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।’ তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ সময়ে দোয়া করা
যাদুল মাআ`দ গ্রন্থে এসেছে, ‘এ মর্যাদাবান মুহূর্তটি হলো- জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর (থেকে মাগরিব পর্যন্ত)।’ এ মতে পক্ষে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে আর তা হলো- জুমার দিন সূর্য উদয় হওয়ার পর (দুনিয়ায়) মানুষ এবং জিন ব্যতীত প্রত্যেক প্রাণীই কেয়ামতের ভয়ে আতঙ্কিত থাকে। জুমার দিনে এমন একটি বরকতময় সময় আছে, যাতে মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন।
কা’ব বিন মালিক এ হাদিসের বর্ণনাকারী হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, এটি কি প্রত্যেক বছরে হয়ে থাকে? হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, বরং তা (এ সময়টি) প্রত্যেক জুমাতেই রয়েছে। অতঃপর কা’ব বিন মালিক তাওরাত (কিতাব) খুলে পাঠ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) সত্য বলেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, অতঃপর আমি (তাওরাত কিতাবের পারদর্শী) হজরত আব্দুল্লাহ বিন সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এবং তাঁকে কা’ব বিন মালিকের সঙ্গে আমার বৈঠকের কথা জানাই। তখন তিনি (হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম) বললেন, আমি সেই সময়টি সম্পর্কেও অবগত আছি। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কাছ থেকে সেই সময়টি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন- ‘এটি (দোয়া কবুলের সেই সময়টি) হচ্ছে জুমার দিনের শেষ মুহূর্ত।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি করে সম্ভব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেছেন, ‘মুসলিম বান্দা তখন নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন।’
আর (জুমার) দিনের শেষ মুহূর্তের সময়টিতে নামাজ পড়া বৈধ নয় (আসর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়া নিষিদ্ধ)। সুতরাং উহা তো নামাজের সময় নয়।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তখন বললেন- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেননি, যে ব্যক্তি কোনো মজলিসে বসে নামাজের অপেক্ষায় থাকে সে ব্যক্তি নামাজ পড়া (নামাজের ওয়াক্ত হওয়া) পর্যন্ত নামাজেই মশগুল থাকে?’
অর্থাৎ জুমার দিনের শেষ মুহূর্ত তথা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে দোয়া করা, নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। এই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন।
আল্লাহ তাআলার কাছে বান্দা যেকোনো সময় দোয়া করতে পারে, তিনি সব সময় বান্দার প্রার্থনা শোনেন। কিন্তু কিছু বিশেষ বিশেষ সময়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) নিশ্চিত দোয়া কবুলের আগাম বার্তা আমাদের দিয়ে গেছেন। সুতরাং এই সময়গুলো আমাদেরকে গণীমত মনে করে আমল করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন (আমিন)।