ফিচার ডেস্ক : সূর্যের আলোর সাথে হিসাব করে ঘড়ির কাঁটা চলে। আমাদের শরীরের যে ঘড়ি আছে সেটির কাঁটা নিয়ন্ত্রণ করে সূর্যের আলো। শীতের মিঠে কড়া রোদই সারিয়ে দিতে পারে শরীরের হাজারো অসুখ। সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গায়ে লাগছে না বলেই বাড়ছে ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত লক্ষণ। সুস্থ থাকতে সূর্যালোকের বিকল্প কোনো কিছুই নেই। ত্বক আর চুলের জন্যেও সমানভাবে উপকারী হলো এই সূর্যালোক। যে কারণে রোজ সকালে সূর্যের আলো গ্রহণ করা এত জরুরি। সকালের আলোর তেজ এত বেশি থাকে না। আর সেই আলোতেই কোলন ক্যানসারসহ একাধিক রোগ সেরে যায়।
প্রকৃতিতে সূর্যের আলোর কোনো অভাব নেই। যা কি না ভিটামিন ডি-র অন্যতম উৎস। তবু এই ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন বহু মানুষ। সূর্যের আলো মানব শরীরে ভিটামিন ডি তৈরিতে সহায়তা করে। আর ভিটামিন ডি হচ্ছে মানব শরীরের জন্য ম্যাজিক মেডিসিন। সূর্যের আলো শরীরে যতটা ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে সেটি খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়।
সূর্যের আলো এবং অন্ধকার মানুষের শরীরে কিছু হরমোন তৈরি করতে ও তা নিঃসরণে সহায়তা করে। মানুষের ত্বকে সূর্যের আলো পড়লে মেলানিন নামে একটি রাসায়নিক তৈরি হয়। মানুষের ঘুমের জন্য প্রয়োজন যে হরমোন সেটি হচ্ছে মেলাটোনিন। সেটি তৈরিতে এই মেলানিন প্রয়োজন।
সূর্যের আলোতে গেলে মানুষের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামে একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এটি মানুষের মন, মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। যারা নিয়মিত দিনের আলোতে বের হন না, রাতে কাজ করেন তাদের বিষণ্ণতায় বেশি ভুগতে দেখা যায়। যেসব শীতের দেশে সূর্যের আলো কম সময় ধরে থাকে সেসব দেশে মানুষ বিষাদে ভোগেন বেশি।
মানুষের ত্বকের নিচে এক ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। সূর্যের আলোতে গেলে তা ভিটামিন ডি তৈরি করে। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম তৈরি করে তা ব্যবহারে শরীরকে সহায়তা করে। হাড়, দাঁত, নখের সুরক্ষায় দরকার ক্যালসিয়াম। এই প্রক্রিয়ার শুরু সূর্যের আলোর সাথে ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে।
ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরকে সহায়তা করে। এটি পর্যাপ্ত না পেলে শিশুদের পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া রোগ রিকেট হতে পারে। বয়স্কদের হাড় দুর্বল করে দেয় এমন রোগ অস্টিওম্যালাসিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। একই ভিটামিন শরীরের ফসফেট নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্থ পেশির জন্যেও এটি দরকার।
সকালে উঠেই গা ম্যাজম্যাজ, ক্লান্তি থেকে শুরু করে হাতে পায়ের পেশিতে ব্যথা, গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া। কৈশোরের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই ভিড় করে আসছে এমন রকমারি সমস্যা। এই সব সমস্যার কারণ কিন্তু একটাই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। এই ভিটামিন শরীরে নানা কাজে লাগে। ফলে এটির অভাব হলে কেবল মাত্র হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা ব্যথা-বেদনা নয়, তৈরি হতে পারে আরও বড় সমস্যা। পেশি নাড়াচাড়া করতেও প্রয়োজন হয় এই ভিটামিনের। এমনকি, এর সাহায্য ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে বার্তা পর্যন্ত পাঠাতে পারে না স্নায়ু। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনটি ছাড়া ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য।
অতিরিক্ত চুল ঝরা মানে, অবশ্যই আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব আছে। শরীরে ভিটামিন ডির অভাবে আপনার চুল বেশি মাত্রায় ঝরতে পারে। ভিটামিন ডির অভাবে আপনার শরীরের মাংসপেশি গুলোতে ব্যথা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।
যখনই বুঝবেন আপনার শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি ঘটছে, সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে তা পূরণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য দিন। ভিটামিন ডির আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়া শরীরে ভিটামিন ডি ঘাটতির সঙ্কেত হতে পারে।
ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদি নিয়মিত শরীরে হাড় বা পিঠে ব্যথা বোধ করেন, তাহলে বুঝবেন এটা ভিটামিন ডির অভাবের কারণে ঘটতে পারে। নিয়মিত শরীরে হাড় বা পিঠে ব্যথা বোধ করেন, তাহলে বুঝবেন এটা ভিটামিন ডির অভাবের কারণে ঘটতে পারে।
সাইকিয়াট্রিক হেলথের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র গুরুত্ব অসীম। রক্তে ভিটামিন ডি কম থাকলে সিজোফ্রেনিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
গবেষণা করে দেখা গেছে ভিটামিন ডি আপনার শরীরে নতুন চামড়া গজাতে সাহায্য করে। শরীরের যেকোনো অংশে হওয়া ঘা শুকানোর ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। ক্যালসিয়াম সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃদ্ধ বয়সে যারা হাড়ের সমস্যাতে ভোগেন, তাদের ক্যালসিয়াম সহ বেশ কিছু খনিজের অভাব পূরণ করতে বলা হয়, সেই সঙ্গে ভিটামিন ডির দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়।
ভিটামিন ডির অভাবে আপনার শরীরের মাংসপেশি গুলোতে ব্যথা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। ভিটামিন ডি শরীরের মাংসপেশিকে দৃঢ়তা প্রদান করে, যার ফলে ব্যথা যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
অতিবেগুনি রশ্মি ত্বক ক্যানসারের অন্যতম কারণ। কিন্তু সকালের রোদ গায়ে লাগাতে পারলে ক্যানসার ঠেকিয়ে রাখা যায়। পুরুষদের কোলন ক্যানসার ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সূর্যের আলোর। ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসার এবং প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় সূর্যের আলো।
সঠিক সময়ে সূর্যের আলো ত্বকে লাগাতে পারলে ত্বকের সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সোরিয়াসিস, একজিমা, জন্ডিস, ব্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে এই সূর্যালোক। তবে এর আগে কোনও এক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলে নেবেন।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। সূর্যের আলো থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
সকালের নরম রোদ গায়ে লাগাতে পারলেই সবচাইতে ভালো। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ রোদে বসুন। এতেই অনেক কাজ হয়ে যাবে। সর্বাধিক ভিটামিন ডি পেতে নিজেকে সূর্যের আলোতে রাখার সবচেয়ে সেরা সময় হলো সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে ইউভিবি রশ্মিগুলো তীব্র হয় এবং সূর্যের আলো আরও বেশি ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম।