বর্তমান পূবালী ব্যাংকের যাত্রা ১৯৫৯ সালে। শুরুতে এ ব্যাংকের নাম ছিল ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক। সেই হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকটির বয়স ৬৬ বছর। দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে পূবালী ব্যাংক আর্থিক সূচকগুলো মজবুত অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বপালন করছেন মোহাম্মদ আলী। এর আগে ব্যাংকটির এএমডি ও ডিএমডি হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সকলের সংবাদ-এর অর্থনৈতিক প্রতিবেদক রমজান আলী।
প্রশ্ন: বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক ধরনের সংকট চলছে। সেখানে আপনার ব্যাংক অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর রহস্য কী?
মোহাম্মদ আলী: আমরা ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ করে থাকি। তাই অন্য সব ব্যাংকের চেয়ে আমাদের বিনিয়োগ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। আমরা ঝুঁকিটাকে আগে মোকাবেলা করি। ফলে আমাদের খেলাপি বিনিয়োগের মাত্রা অনেক কম। সার্বিকভাবে বলতে গেলে পূবালী ব্যাংকে কোনো সংকট নেই। বরং আমরা সেসব গ্রাহকদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংক খাতে একটা সংকট চলছে। তাদের বলছি, আসেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো। তাই আমাদের যেহেতু সমর্থ রয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে সেবা দিতে রাজি আছি। এছাড়া এখনো ভালো উদ্যোক্তা আছে। ঢাকার বাহিরেও ভালো উদ্যোক্তা রয়েছে। যারা ভালো ব্যবসা করছেন। তাদেরকে আমরা ঋণ দিচ্ছি। ভালো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যবসার পলিসি চালু করা হচ্ছে। এজন্য নতুন উদ্যোক্তা আসলে আমাদের খুব একটা প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন: বলা হয়ে থাকে একটি ব্যাংকের ভিত্তি মজবুত করতে সুশাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনার ব্যাংকের সুশাসন বিষয়ে জানতে চাই?
মোহাম্মদ আলী: শতভাগ সুশাসন রয়েছে পূবালী ব্যাংকে। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কর্পোরেট গভর্নেন্স খুবই দরকার। কর্পোরেট গভর্নেন্স যার যতো ভালো সে ততবেশি ভালো ব্যাংকিং করতে পারবে। কর্পোরেট গভর্নেন্স ব্যাংকিংয়ের প্রতিটি স্তরে থাকা দরকার আছে। সবাই যদি স্বাধাীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে দেখা যাবে ব্যাংকিংখাতে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। ব্যাংকের পর্ষদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরেই যদি জবাবদিহিতা থাকে সেখানেই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তবে পূবালী ব্যাংক সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সবার জবাবদিহিতা একইরকম। ফলে কেউ সহজে অন্যায় করতে সাহস পায় না।
প্রশ্ন: পূবালী ব্যাংকের আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাই ?
মোহাম্মদ আলী: বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং করাটাই হচ্ছে মূল উদ্যেশ্য। শিল্প ঋণের পাশাপাশি কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি রপ্তানি ও শিল্প খাতে ঋণ দিচ্ছি। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য শাখার পাশাপাশি উপশাখায় বেশি জোর দিচ্ছি। নিচের দিকের লোকজনকে ক্ষুদ্রঋণ ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে আমরা চাই বেশি বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আমরা মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে বেশি জড়িত হতে চাই। এটাই হলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। তাই এ বছর ১২’শ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে শুধু এসএমইখাতে। তবে আমরা ঋণ দেয়ার সময় প্রতিটি ঋণই খুবই গুরুত্ব সহকারে যাচাই-বাছাই করে দিয়ে থাকি। রাজনৈতিক বিবেচনা পূবালী ব্যাংক কাউকে ঋণ দেয় না। ফলে রাজনৈতিক বিবেচনা কোনো ঋণ নেই। সেটা ছোট আর বড় ঋণ হোক। কোনোটাই নেই।
প্রশ্ন: জুলাই পরবর্তী কয়েকটি ব্যাংক খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে আপনার ব্যাংকের আর্থিক সূচক অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলবেন প্লিজ?
মোহাম্মদ আলী: পূবালী ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলো অনেক মজবুত। পূবালী ব্যাংক বিদায়ী ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ১ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। বর্তমানে আমানতের পরিমাণ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আমাদের ৫০৮টি শাখা. ২৭৮টি উপশাখা রয়েছে। বর্তমানে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশের মতো খেলাপি রয়েছে।
প্রশ্ন: ঋণ না দিয়ে ব্যবসায়ীদের ফাইল ঘুরানোর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি কতোটুকু সত্যি বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ আলী: আগেই বলেছি। এ ব্যাংকে শতভাগ সুশাসন রয়েছে, সবার জবাবদিহিতা রয়েছে। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা অবশ্যই আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়ে থাকে। সত্যিকার ব্যবসয়ীরা ঋণ পায়নি এমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমরা ঋণ দেয়ার আগে সব ধরনের কাগজপত্র ভালো করে যাছাই-বাছাই করে ঋণ দিয়ে থাকি। প্রকৃত ব্যবসায়ী হলে অবশ্যই আমরা তাকে ঋণ দিবো। নামমাত্র কাগজপত্র দিয়ে পূবালী ব্যাংকে ঋণ হয় না। ফলে ৬৬ বছর ধরে সুনামের সাথে ব্যাংকটি চলছে। অনেকেই পূবালী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ পূবালী ব্যাংকে ঋণ নেয়ার জন্য কোনো প্রকার ঝামেলা পোহাতে হয় না। সঠিক নিয়মেই ঋণ হয়ে যায়।