বিদেশ থেকেই ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বিদেশ থেকে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন আরিফ কাদরী। এরপর ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডি সৈয়দ ফরিদুল ইসলামকে চলতি দায়িত্বে এমডি করা হয়। এরই মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ এনসিসি ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মামদুদুর রশীদ একসময় ইউসিবির অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।
এদিকে ইউসিবির প্রকৃত আর্থিক চিত্র যাচাই করে দেখতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। আগামী অক্টোবরে এই নিরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা।
ইউসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী। বিদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল সম্পদ থাকার খবর ও শেয়ারধারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর এই ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাইফুজ্জামান ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদেশে বিপুল সম্পদ থাকার কারণে চলতি বছরের শুরুতে গঠিত নতুন আওয়ামী লীগ সরকারে সাইফুজ্জামানকে মন্ত্রী করা হয়নি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর সাবেক পরিচালক ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রা আটকে না দিলে অনিয়মের প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে বিচার করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউসিবিকে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা। তখন তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকে নানা অনিয়ম করার অভিযোগ তোলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানান, কাগজপত্রে স্ত্রী রুখমিলা জামান ইউসিবির চেয়ারপারসন হলেও বাস্তবে স্বামী সাইফুজ্জামান চৌধুরীই এ দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণেই ব্যাংকটি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ওই চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট ইউসিবির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন চেয়ারম্যান করা হয় ব্যাংকটির উদ্যোক্তা প্রতিনিধি শরীফ জহীরকে। পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান শেয়ারধারী মো. তানভীর খান। স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. ইউসুফ আলী ও হিসাববিদ ওবায়দুর রহমানকে।
ইউসিবির নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ, বিনিয়োগ, কেনাকাটা, মানবসম্পদসহ সব ধরনের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য সাতটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এখন ব্যাংকটিতে নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এতে ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে পর্ষদ ও কর্মকর্তারা আশা করছেন।