নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য আগামীকাল বুধবার গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের জন্য আগামীকাল বুধবার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে দুপুর দেড়টায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। একই কর্মসূচি সারাদেশে পালিত হবে।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণে কার্যকরী ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে ছাত্র তরুণদের এই আন্দোলনে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেভাবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে আজ যেভাবে প্রায় সারা দেশে হামলা, আক্রমণ ও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় চিহ্নিত সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যেভাবে দেশব্যাপী সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর আহত হবার ঘটনা ঘটেছে, অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আমরা মনে করি, এই সমুদয় ঘটনার পুরো দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে উস্কানি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন মোকাবেলা করার নির্দেশনা নামে দেওয়া হয়েছে তা গত দুদিনের সমগ্র ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
‘আমরা এই পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তীব্র প্রতিবাদ করে বলতে চাই যে, দমন-নিপীড়ন ও সহিংসতা চালিয়ে সরকার আজ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এখনও পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত শতাধিক সরকার দলীয় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওয়াত আনা হয়নি। আমরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আজ পুলিশের গুলিতে ও ছাত্রলীগের স্বশস্ত্র হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনাও জ্ঞাপন করছি। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক আহত ও নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনতিবিলম্বে কোটা ব্যবস্থার ন্যায্য ও যৌক্তিক সংস্কারের দাব অনতিবিলম্বে মেনে নেওয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই যে হত্যা, দমন-নিপীড়ন করে অতিতের কোনো স্বৈরাশাসক যেমন শেষ রক্ষা করতে পারেনি বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারও দমন-নিপীড়নের এই পথে শেষ রক্ষা করতে পারবে না। আমরা দেশবাসীকে ছাত্র সমাজের এই ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক দাবির পক্ষে সোচ্চার হতেও উদ্দাত্ত আহ্বান জানাই।
লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। গণতন্ত্র মঞ্জের নেতাদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়য়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম।
কোটা সংস্কার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক অবরোধে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এদিন এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় সড়কে। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীতে দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও সারাদেশে আহতের সংখ্যা কয়েকশ। ঢাকাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত সাত শিক্ষার্থী।