বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উদ্যোগে এবং শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সহযোগিতায়’ প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কম্বেটিং ফাইনান্সিয়াল অব টেরোরিজম’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার (১৩ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিএফআইইউ’র পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ মাসুম প্রধান অতিথি হিসেবে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএফআইইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) এম. আখতার হোসেন, রিসোর্স পার্সন হিসেবে বিএফআইইউ’র যুগ্মপরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল প্রধান ও ফোরদৌস আরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ডিক্যামেলকো মো. আসাদুল ইসলাম খান। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে কর্মরত শাখা ব্যবস্থাপক, ব্যামেলকোরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএফআইইউ’র পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ মাসুম বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে গতিশীল করার পাশাপাশি এ ব্যবস্থা যেন মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নমুক্ত থাকে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পৃথিবীতে যতগুলো বড় বড় আর্থিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সূত্রপাত হয়েছে ছদ্মনামে বা নামে-বেনামে অথবা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার মাধ্যমে। তাই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৫(১) ধারা মোতাবেক অব্যশই গ্রাহকের কেওয়াইসি সম্পন্ন করতে হবে, গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক পরিচিতিমুলক তথ্য সংরক্ষণপূর্বক হিসাব খুলতে হবে। সুযোগ সন্ধানী অপরাধীরা হিসাব খোলে মূলত তাদের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের অবৈধ উৎস গোপন করার জন্য। তাই লেনদেন মনিটরিং এর বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন কোনো অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, সুযোগ সন্ধানী হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল ব্যাংকিং সেক্টরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, নিয়মিতভাবে লেনদেন মনিটরিং করতে হবে। লেনদেন মনিটরিংয়ে অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে এসটিআর/এসএআর হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল হতে আরো বেশি সংখ্যক এসটিআর/এসএআর দাখিল হওয়ার কথা। তাই এখন থেকে এসটিআর/এসএআর দাখিলের বিষয়ে আপনাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।
তিনি বলেন সন্ত্রাসবাদ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিশেষভাবে আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকির সৃষ্টি করে, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের অর্জিত ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে। বিষয়টির ব্যাপক নেতি-বাচক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ইঋওট এর পক্ষ হতেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। জঙ্গি ও তাদের অর্থায়ন যাতে ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সকলকে এ বিষয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নিজেদের দেশকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডি, অনলাইন গেমিং/বেটিং, অনলাইন জুয়া, অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ফরেক্স ট্রেডিং করা হচ্ছে। এর ফলে দেশ হতে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অপরাধীরা যেন এ ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন না করতে পারে এ বিষয়ে আপনাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিএফআইইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ভৌগলিকভাবে সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলে চোরাচালান, মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধলব্ধ অর্থ কোনোভাবেই যেন ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবেশ করে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংকসমূহকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশের নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদেরকে এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, তাহলেই দেশ টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশেষ অতিথি শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) এম. আখতার হোসেন বলেন, মানিলন্ডারিং একটি দেশের উন্নয়নকে সার্বিকভাবে বাঁধাগ্রস্থ করে। আমরা যদি এ বিষয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলেই সত্যিকার অর্থে এই দেশকে আমরা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারব।