নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সেটির মূল অংশ প্রকাশ হয়েছে।
সরকারের ওই পরিপত্র বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের এই রায়ে বলা হয়েছে, কোটা পুরোপুরি বাতিল করা যাবে না। তবে সরকার চাইলে কোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারবে। কোটায় কাউকে না পাওয়া গেলে বা পদ ফাঁকা থাকলে তা সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা যাবে।
অর্থাৎ কোটা পুরোপুরি বাতিল করা যাবে না, তা বহাল রাখতে হবে। পদ পূরণ না হওয়া সাপেক্ষে শূন্যপদে মেধার তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
সরকারি ওই প্রজ্ঞাপনে চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং একইসঙ্গে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে শূন্যপদে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ হবে মর্মে শর্তসাপেক্ষে কোটা বহাল রাখা হয়। মূলত, ৯-১৩তম গ্রেডে পুরোপুরি কোটা তুলে দেওয়াকেই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্ট সেটাকেই অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন বলে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
তবে বুধবার আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেওয়ায় হাইকোর্টের এই রায় এখন কার্যকর নয় বলে জানিয়েছেন শেখ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না।
হাইকোর্টের এই বেঞ্চ থেকেই গেল ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় এসেছিল। ওই রায়ের পরই নতুন করে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে।
রায়ে আদালত বলেছেন, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি–নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি–নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্দ্বী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ যদি অন্যান্য থাকে, সে ক্ষেত্রে কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদালত আরও বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লেখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা থাকছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।
ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে ওই বছরই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং আংশিক ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে বহাল রেখে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন।
গত ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৪ জুলাই কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেন আদালত। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন।
পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী পৃথক এক আবেদনও করেন উচ্চ আদালতে।
দুই আবেদনেরই শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ১০ জুলাই হাইকোর্টের ওই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা (স্টেটাস কো) জারি করেন। পরবর্তী শুনানির জন্য ৪ আগস্ট দিন রাখেন।
এদিকে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দেওয়া বাংলা ব্লকেড নামের এই কর্মসূচিতে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।