নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ব্যয়ের বাড়তি চাপ সামাল দিতে সাধারণ মানুষ এখন জমানো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিও কমছে। সদ্য সামপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। নতুন সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল পরিশোধ বেশি হয়েছে এ সময়ে।
সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরে প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, গত মে মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। আর সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়েও (২০২২-২৩) নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। ওই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে (প্রথম ১১ মাসে) সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি কমেছে ৩৮৬ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে ওই অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি হয়েছিল ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরটিতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার এক টাকারও ঋণ নেয়নি। এসব দিক রেখেই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে বিগত ১৩ বছরে মূল্যস্ফীতির এমন আকাশচুম্বী হার দেখা যায়নি। অর্থবছরজুড়ে সংকটের কারণে টিকে থাকতে দুর্দিনের সঞ্চয় ভাঙিয়ে চলছেন সাধারণরা। এতে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।
দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার। তবে সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। ব্যয়ের বাড়তি চাপ সামাল দিতে সাধারণ মানুষ এখন হয় ঋণ করছেন বা জমানো সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন।