এসএস ডেস্ক: জনগণ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দিতে বিশ্বের সব দেশই ঋণ করেছে। ফলে বড় ধরনের ঋণ সংকটে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিশ্বের সব দেশের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ লাখ কোটি ডলার, এই অঙ্ক বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় সমান। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য থুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিপুল পরিমাণ ঋণ মানুষের জীবনে বড় চাপ তৈরি করছে।
ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনাকালীন জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা। জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দিতে বিশ্বের সব দেশই ঋণ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ক্রমবর্ধমান এই ঋণের বোঝার কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও।
চলতি বছর বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এসব দেশের রাজনীতিকরা ঋণ সমস্যা একরকম উপেক্ষা করে যাচ্ছেন, অর্থাৎ ঋণের রাশ টানতে যে কর বাড়াতে হবে বা ব্যয় হ্রাস করতে হবে, সে বিষয়ে তারা ভোটারদের সঙ্গে সততার পরিচয় দিচ্ছেন না। ক্ষেত্রবিশেষে এই রাজনীতিকরা এমন এমন অঙ্গীকার করছেন যে তার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির সূচক আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বা নতুন কোনো আর্থিক সংকট তৈরি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি আবারও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ঘাটতির বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করা দরকার। বিনিয়োগকারীরাও দীর্ঘ মেয়াদে দেশটির আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তবে বিষয়টি শুধু দীর্ঘ মেয়াদে নয়। বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ভ্যানগার্ডের প্রধান রজার হালাম সিএনএনকে বলেন, পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ঘাটতি মধ্য মেয়াদে উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের সব দেশেই ঋণের বোঝা বাড়ছে, বিনিয়োগকারীরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফরাসি নির্বাচনের প্রথম ধাপে ডানপন্থীরা এগিয়ে থাকায় এক ধরণের রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটির ঋণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এই বাস্তবতায় যে বিনিয়োগকারীরা ফ্রান্স সরকারের বন্ড কিনছেন, তারা সরকারের কাছে আরও বেশি সুদ দাবি করছেন।
বিনিয়োগকারীরা যতটা ভয় পেয়েছিলেন, ফ্রান্সের পরিস্থিতি ততটা খারাপ নাও হতে পারে। দেশটিতে এখনই আর্থিক সংকট হওয়ার বাস্তবতা নেই। কিন্তু সরকারের ব্যয় ও রাজস্ব আয়ের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান থাকায় বন্ডে যারা বিনিয়োগ করছেন, তারা সরকারের কাছে আরও বেশি হারে সুদ চাইছেন।
দেশে দেশে ঋণ বাড়ছে। এর অর্থ হলো ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে। সরকারের আয়ের বড় অংশ সুদ ও আসল বাবদ ব্যয় হয়ে গেলে জরুরি সেবা যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমে যায়। সেই সঙ্গে মহামারি ও যুদ্ধের মতো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ থাকে না।
সরকারি বন্ডের সুদ বাড়লে বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। বন্ডের সুদ বাড়লে বন্ধকি ঋণের সুদহারও বাড়ে, তখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে ঋণ করতে হয়। এতে যেমন ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়, তেমনি ব্যক্তি মানুষেরও ব্যয় বেড়ে যায়।
ঋণের সুদহার বাড়লে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে ভাটা পড়ে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকটের সময় সরকারের পক্ষে ঋণ করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করাও কঠিন হয়। এসবের ফল হলো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া।
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। দেশটির মোট ঋণ জাতীয় ঋণসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে গত বছর শাটডাউনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারেন ডিনান বলেন, এই পরিস্থিতিতে যে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, রাজনীতিকরা তা নিতে উৎসাহী নন। মানুষের জীবনে তার বড় প্রভাব পড়তে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির আরেক অধ্যাপক কেনেথ রোগোফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিএনএনকে তিনি আরও বলেন, ঋণ তো আর বিনামূল্যে পাওয়া যায় না।
মহামারির আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর নীতি সুদহার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ছিল। ২০১০ সালের দিকে অনেক বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা মনে করেছিলেন, নীতি সুদহার অনেক দিন এই পর্যায়ে থাকবে। অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।