নিজস্ব প্রতিবেদক: বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত মে মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাই মাসের মধ্যভাগে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।
এরই মধ্যে মুদ্রানীতির মৌলিক কাঠামো চূড়ান্ত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সংকুলানমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।
এছাড়া ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হতে পারে। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্দেশিত ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক, তবে এতে লক্ষ্য অনুযায়ী সুফল পাওয়া যায়নি। এজন্য আসন্ন মুদ্রানীতিতে ক্রুলিং পেগ পদ্ধতি আগের মতোই রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, আগামী ৭ জুলাই থেকে মুদ্রানীতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এরপর ১১ তারিখে মুদ্রানীতি সংক্রান্ত কমিটির চূড়ান্ত বৈঠক হবে। সেখান থেকে গভর্নরের কাছে একটি তারিখ চাইবে কমিটি। সব কিছু ঠিক থাকলে জুলাই মাসের মধ্যভাগে ঘোষিত হবে নতুন মুদ্রানীতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ডলারের দাম এবং সুদের হার নির্ধারণে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। ব্যাংক ঋণের সুদহার ইতিমধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারপরও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। আর অর্থনীতির ভিতকে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল করছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়। এতে ডলার সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থা থেকে ধার দেনা করে রিজার্ভ কিছুটা বাড়িয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।