নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (জুন ২৩) আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই আবেদন থাকবে আমাদের সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। যেকোন একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠনটা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় আর দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, যতই ষড়যন্ত্র হোক (সফল হওয়া যায়)।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলব, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন, এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কত কষ্ট করেছে। বার বার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু এই সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে, সেই ভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি, সেই আস্থা-বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, (জনগণের) সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বার বার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। বার বার ক্ষমতায় এসে, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ থেকে এই ২০২৪ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে আজকে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটাকে (আস্থা-বিশ্বাস) ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১, ২১০০… অনেক বয়স হয়েছে, ততদিন হয়তো বেঁচে থাকব না। কিন্তু আজকে যারা নবীন, যারা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক হবে; আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলে এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্লাটিনাম জুবিলিতে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
মৃত্যুকে পরোয়া করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, মৃত্যু যেকোন সময় সবার হতে পারে। যেকোন সময় মৃত্যু আসতে পারে। তার জন্য আমি কোনদিন ভীত না। কখনো ভয় পাইনি, পাব না। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আঁশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির প্লাটিনাম জয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকসহ দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পায়রা ও বেলুন অবমুক্ত করেন।
এরপর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে পরিবেশন করা হয় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং। পরে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করা হয়।
বেলা ১২টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ৩টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাক-ঢোলের তালে নেচে গেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন অনেক নেতাকর্মী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।