নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্য বাজেটে ধরা হয়েছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ পদক্ষেপে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়বেন। এই যুক্তি দেখিয়ে বাজেটের লক্ষ্য পূরণে সরকারকে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সেখানে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। সেই ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ।
সন্ধ্যায় ঢাকার মতিঝিলে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ভবনে বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তাদের দৃষ্টিতে সেটা ‘বেশি’। এটা যদি ব্যাংক থেকে সরকার নেয়, তাহলে ব্যাংক থেকে আমাদের ব্যবসায়ীদের টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা জটিলতা হতে পারে। আমাদের লোন পেতে কষ্ট হতে পারে। এ অর্থ যদি বিদেশ থেকে সরকার লোন নিতে পারে, আমি মনে করি ভালো হবে। তবে সার্বিকভাবে এই বাজেট ‘বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে মনে করছে এফবিসিসিআই।
সভাপতি বলেন, প্রতিবছর যখন বাজেট হয়, সর্বশেষ ৪-৫ বছরের বাজেটে আপনারা দেখেছেন ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাজেটের আকার বেড়েছে। কিন্তু এবার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ আকার বেড়েছে। আমি মনে করি, এটা যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য; যদি আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সামগ্রিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। এবারের বাজেটে এটাকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, উচ্চাভিলাসী কোনো প্রকল্প না নিলে এবং আমাদের যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে, ভালোভাবে যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, আমরা যদি সবাই মিলে চেষ্টা করি, তাহলে এটা (মূল্যস্ফীতি) কমে আসবে বা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে, যা বহু বছরের মধ্যে বেশি। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের খরচের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা যেটা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সেটা এবারও তাই আছে। আমাদের প্রস্তাব ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার। আমাদের অনুরোধ থাকবে, এটা যেন সেই প্রস্তাব অনুযায়ী রাখা হয়।
রপ্তানি বাজার বড় করতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) বাদ দেওয়ার যে দুটি প্রস্তাব এফবিসিসিআই দিয়েছিল, সেটি রাখার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এটি এবং এআইটি প্রত্যাহারের দুটো প্রস্তাব আমরা করেছিলাম, আমি তা আবারও করছি।
রাজস্ব আদায়ের ‘কঠিন’ চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে করজাল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আপনারা দেখেছেন যে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আদায় করা কঠিন বলে আমরা মনে করি। তবে কঠিন হবে না, যদি করজাল বাড়ানো যায়। যারা করা দিচ্ছে, তারা ছাড়াও নতুন করদাতাদের আনতে হবে।