অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: কৃষক ও কৃষিখাতকে আরও আধুনিকায়ন করতে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসতে হবে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘কোনো কিছু না চাপিয়ে কৃষকদের উপযোগী প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে। সঠিক তথ্যের অভাবে পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অন্যদিকে ভোক্তাকে অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
আজ স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত স্মার্ট এগ্রিকালচার চ্যালেঞ্জেস ইন ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকের ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ এবং বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্য ক্রয়ের অভিযোগ আছে। এর মাঝে যারা আছেন তাদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। কৃষককে উৎপাদনে উৎসাহিত করতে পণ্যের সঠিক দাম দিতে হবে। উৎপাদন খরচ কমানোসহ পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই।’ এসময় স্থানীয় কৃষি এবং কৃষকের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আনলেই হবে না, কৃষকের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে।’
আলুর উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বছর আলুর দাম ৫০ টাকা কেজি খাচ্ছেন। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে গালি দিচ্ছেন। তবে কৃষকরা ভালো দাম পেয়েছে গত দুই মৌসুম। সেজন্য আগামী বছর আলুর উৎপাদন বাড়বে। এক টন হলেও বেশি হবে-এটা লিখে রাখেন সবাই। আমাদের দুটি কাজ সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটি হলো কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, আরেকটি ভোক্তাকে সহনীয় দামে পণ্য নিশ্চিত করা। তবে অনেক সময় ভ্যালুচেইনের সমস্যার কারণে সেটা হয় না।’
সেমিনারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘সার ও কীটনাশক ভর্তুকি না দিয়ে সেই অর্থ সরাসরি কৃষককে দিলে এটা আইএমএফ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০-৩০শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়, সেই সাথে এখাতে ব্যয় ২০শতাংশ হ্রাসের পাশাপাশি কৃষকের আয় ৩০-৪০শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমানে এ খাতে সাপ্লাইচেইনের অপর্যাপ্ততা, বাজারে পণ্য প্রবেশাধিকারের সুযোগ না থাকা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন প্রভৃতি সমস্যার মুখোমুখী হতে হচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি। কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের লজিস্টিক চেইন এবং মার্কেট চেইন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।’
সেমিনারে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কৃষিবিদরা বলেন, ‘পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত এবং সঠিক দাম পেতে প্রযুক্তিকে কৃষকের আরও কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে সেই প্রযুক্তি হতে হবে সহজ।’
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ডিভাইসের উচ্চ মূল্য। কৃষকের কাছে স্বল্প দামে ডিভাইস পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারের বিনিয়োগ দরকার।’