নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের আইন অমান্য করে সদ্য বিদায়ী এমডিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। ব্যাংকটি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান।আর নিজেদের নিয়ম নিজেরাই ভেঙ্গেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। নিয়ম লঙ্ঘন করে বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ারকে।
মোহাম্মদ শাহ আলম সারোয়ারকে নিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা বলছে, কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকের চাকরি শেষ হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে একই ব্যাংকে উপদেষ্টা বা পরামর্শক নিযুক্ত করা যাবে না।
অথচ বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ারকে ব্যাংকটির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালের ২১ মে ব্যাংকের পরিচালক, চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা ও পরামর্শক নিযুক্তির বিধি বিধান প্রসঙ্গে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় নিরপেক্ষতা, পেশাগত মান ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ১৫(৯) ধারায় ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের যোগ্য হবেন না মর্মে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। আইনের ওই বিধান অনুযায়ী ব্যাংক- কোম্পানীর সাবেক পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অন্য কোনো কর্মকর্তা নিয়মিত বা চুক্তি ভিত্তিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ১৫ (৯) ধারার উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় নিরপেক্ষতা, পেশাগত মান ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালক, চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা বা পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংক-কোম্পানীর সাবেক পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রধান নির্বাহীর নিচের অব্যবহিত দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তা অবসর বা অব্যাহতি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত একই ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা অবসর বা অব্যাহতি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কখনোই একই ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না।
কিন্তু সেই নীতিমালা উপেক্ষা করে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় আবারও তাকে একই ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংক নিয়ে এর আগেও জলঘোলা কম হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নিয়েও ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিলো। মাত্র এক মাসে এক হাজার কোটি টাকার সব বন্ড বিক্রি শেষ হয়েছিলো। আর বন্ডের মাধ্যমে এ অর্থ তুলেছে আইএফআইসি’র চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল)।
ব্যাংকটির সাবেক এমডি মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ার বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের পুরো বছরের মধ্য ৪ মাসই কাটিয়েছিলেন বিদেশে। সেবছর এ প্রভাবশালী এমডি ২১ বার বিদেশ গিয়েছেন। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসে বিষয়টি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ব্যাংকের কর্যক্রমে ক্ষতি হওয়া ও বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিদেশ সফরের লাগাম টানতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস কিংবা ব্যক্তিগত ছুটিতে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এতে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনগত ঝুঁকিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’
এদিকে ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে আইএফআইসির শেয়ার দর। মঙ্গলবার (২৮ মে) ব্যাংকটির শেয়ারের লেনদেন শেষ হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়। যা আগের দিনের তুলনায় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। অবশিষ্ট শেয়ারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এবং উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ