অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। মাত্র ৫ মাস হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ।
ফলে পরিচালকরা পদত্যাগ করায় আজ রোববার মালিকপক্ষের প্রতিনিধি খলিলুর রহমানকে প্রধান করে ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আগের পর্ষদের পারভিন হক শিকদারসহ অধিকাংশ পরিচালকই বাদ পড়েছেন। মাত্র ৫ মাসের মাথায় আবারও পর্ষদ ভেঙে দেয়া হলো।
কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। কর্মকর্তারাও চান না ব্যাংকটি অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হোক। এজন্য ব্যাংককে শক্তিশালী করতে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যক্রম শুরু করে দেন তারা। ঋণ আদায়ে বিভিন্ন শাখাগুলোকে লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
গত ৯ই এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বৈঠকে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে আরও শক্তিশালী করতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিকে চেয়ারম্যান করে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। যাতে ব্যাংকটিতে সুশাসন নিশ্চিত হয়।
এর আগে, কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল ব্যাংক। এর পরিবর্তে খেলাপি ঋণ ও সাধারণ ঋণ আদায় জোরদারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে চায় ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এর কিছুদিন পরেই পর্ষদ ভেঙে দেয়ার খবর পাওয়া গেল। তারও আগে গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে সুশাসনের অভাব ও দুর্বল আর্থিক অবস্থার অভিযোগে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমরা যদি ব্যাংকটিকে ভালো অবস্থায় আনতে পারি তবে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবো না। পরিচালনা পর্ষদ অনাদায়ী ঋণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ ( ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৪৭ (১) এবং ৪৮ (১) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ বিআরপিডির (ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ) আদেশের মাধ্যমে অবিলম্বে কার্যকর করে বাতিল করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ও জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠন করা হয়েছে।
নতুন পর্ষদে আগের পর্ষদের অধিকাংশ সদস্যই বাদ পড়েছেন। একসময় ব্যাংকটিতে শিকদার পরিবারের কর্তৃত্ব থাকলেও বর্তমান পর্ষদে সেই পরিবারের কাউকে রাখা হয়নি। বাদ পড়েছেন পারভিন হক শিকদারও।
নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক আলহাজ্ব খলিলুর রহমান। এ ছাড়া পরিচালক হিসেবে রয়েছেন– ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচালক লে.জে. মো.সফিকুর রহমান (অব), প্রতিনিধি পরিচালক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধি পরিচালক এরশাদ মাহমুদ, প্রতিনিধি পরিচালক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম, প্রতিনিধি পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তফাজ্জল হক। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর নিয়ম ও বিধি ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবার কেন আবার পর্ষদ ভাঙা হয়েছে- এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ন্যাশনাল ব্যাংক বর্তমানে ভালো কাজ করছে। ফলে তারা এখনই মার্জ হতে চায় না। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের এমন বক্তব্যের পরই বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে।
এই বিষয়ে ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার এবং খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।