নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে রাখতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। রমজানের আগেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এনিয়ে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মিটিং করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরকেও।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য কমানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করলেও রমজানকে সামনে রেখে এবার চূড়ান্তভাবে বাজারের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নিতেও বলা হয়েছে। এজন্য রমজানের আগেই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলো। রমজানে পণ্য সরবরাহ ও মূল্য ঠিক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি পণ্যের দাম নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে।
গত ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশের সব পৌরসভার মেয়র ও প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এই চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে স্বস্তি দেওয়া। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন তারা। এজন্য শুধু নির্দেশনা দিলেই হবে না এই নির্দেশনা বাস্তায়ন করতে হবে। এবারের রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম যাতে স্বাভাবিক ও ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে বলে মনে করেন তারা।
সরকার দলীয় নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছিল সেটা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। সংকটের সমাধানে সরকার ও দলীয়ভাবে কাজ করছে। সরকার আন্তরিকভাবে সক্রিয় হয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এজন্য যারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সরকার নানাভাবে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কষ্টকর। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় দুঃসাধ্য একটি বিষয়। এদেশের খুচরা বিক্রেতাদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকজনের কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই কষ্ট অনুধাবন করি এবং জনগণের প্রতি সহমর্মী। এই মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের কোনো ত্রুটি না থাকলেও সরকারি দল হিসেবে দায় এড়ানো সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের সংস্থাগুলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের জন্য কাজ করে। বিএনপি তা করে না। তারা যা বলে তা দোষারোপে রাজনীতি। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে না পারলেও দোষারোপ আর অপপ্রচার করতে পারে।