নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আমরা একযোগে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে চাচ্ছি। আগামী ১ মার্চ থেকে এ পরিবর্তন দেখবে দেশ। ভোক্তা থেকে উৎপাদক পর্যায়ে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিসি বা ভোক্তা অধিদপ্তর দিয়ে কোনো হ্যারাজমেন্ট (হয়রানি) নয় বরং সাপ্লাই (সরবরাহ) যথেষ্ট রাখা হবে। পাশাপাশি চালের বস্তায় উৎপাদন বছর, তারিখ, উৎপাদন মূল্য, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্য লেখা লেবেল থাকবে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ত্রৈমাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) উজমা চৌধুরী, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এমসিসিআইএ’র সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে চাচ্ছি। ভোক্তা থেকে উৎপাদক পর্যায়ে কারসাজি ঠেকানো যাবে। আগামী মাস থেকেই চালের বস্তায় লেবেল থাকবে। সেখানে লেখা থাকবে ধানের উৎপাদনের বছর ও তারিখ, উৎপাদন মূল্য, পাইকারি মূল্য, খুচরা মূল্য। এখানে দাম বাড়িয়ে লেখার কোনো সুযোগ থাকবে না। কারসাজি করা যাবে না।
১ মার্চ থেকে বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটা পণ্যের দাম কারওয়ান বাজারে ১০০ টাকা হলে, মোহাম্মদপুর বাজারেও ৮০ টাকার জিনিস ১০০ টাকা হয়। অথচ দাম কমলে নানা অজুহাতে সেটা কমাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। আগামী ১ তারিখ থেকে বাজারে পণ্যের দাম লেখা থাকবে ওয়েবভিত্তিক। এখানে কোন বাজারে কী দাম সেটা উল্লেখ থাকবে। কম-বেশি করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অনেক সময় অভিযানকালে হয়রানি করে- এক ব্যবসায়ীর এমন অভিযোগে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং সরবরাহ ঘাটতি ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ভোক্তার নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৎপর। পুলিশিং করে বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিয়ে মার্কেট ব্যবস্থাপনা করতে চাই না। আমি চাই পণ্যের সাপ্লাই যেন যথেষ্ট থাকে, বাজারে যাতে কেউ ম্যানুপুলেট করতে না পারে। বাজারের ব্যবস্থাপনা যেন সুষ্ঠু হয়, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা সবাইকে আমরা অনুরোধ করবো। খাদ্যের প্রতিটি বস্তার গায়ে লেবেল থাকবে এটা কবে উৎপাদন হয়েছে, মিলিং হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে। আমার নির্দেশ আছে ভোক্তা অধিদপ্তর কোনো অভিযান পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটি বা অন্য কোনো অভিযানে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি রাখার জন্য। এতে উভয়ই সমাধান পাবে, অভিযানও সহজ করে তুলবে।
টিটু বলেন, প্রত্যাশা করছি বাজারে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখার। প্রধানমন্ত্রী এটা গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রতিটি মন্ত্রণালয় এটাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। আস্তা রাখেন, আশা করছি পজিটিভ কিছু দিতে পারবো। সবাই যদি একটু দায়িত্বশীল হই তাহলে ভোক্তারা উপকৃত হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে রমজানে পণ্যের দাম কমাতে মালিকরা নমনীয় আচরণ করেন। মক্কা-মদিনায় বড় বড় খেজুর মালিকরা খেজুর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আপনারাও এবারের রমজানে অন্তত নমনীয় হবেন দয়া করে। আপনারা ঢাকা শহরে, গাজীপুর বা আপনাদের কারখানা সংলগ্ন এলাকায় সুলভমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করুন। এতে বাজার পরিস্থিতি অনেকটা ভালো থাকবে।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, পণ্য সরবরাহ, বাজার মনিটরিংসহ নানামুখী পদক্ষেপ থাকবে। এসব পদক্ষেপের ফলে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রমজান উপলক্ষে সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি প্রান্তিক পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, খেজুরসহ পাঁচ ধরনের পণ্য সরবরাহ করবে। এ কারণে হয়তো সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে। আপনারাও (ব্যবসায়ী) রমজানে নমনীয় আচরণ করবেন দয়া করে। নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ করা গেলে কেউ মজুতদারি করে দাম বাড়াতে পারবে না। পণ্যের দামও যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে।