নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাসমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্রই সকল শ্রেণি-পেশা ও ধর্মের মানুষের রাজনৈতিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সফল ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে। তাই সময়ের একান্ত প্রয়োজন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ (বুধবার) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বহুমুখী সংকট উদ্ঘাটন ও নিরসন কল্পে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন আমির বলেন, বাইরে থেকে আনা মূলনীতি, অসৎ লোভী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সহিংস দমন-পীড়নমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সিন্ডিকেট কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আর লুটেরাদের কবলে পড়ে বাংলাদেশ সমস্যার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। মানুষের যাবতীয় অধিকার গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই হত্যা করা হয়েছে। রাজনীতিকে সহিংসতা ও নোংরামির চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে রাজনীতিকে দূষিত ও বিষাক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতকে আইন করে লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি খাত বর্গীদের হাতে বর্গা দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাকে চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশে এক ধরনের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবিধান, আইন ও উন্নয়নের ভুয়া আবরণে একক ব্যক্তির এই শাসন ক্ষমতা বাকশালের আধুনিক সংস্করণ হয়ে জাতির ওপরে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সীমাহীন দুর্নীতি, চরম দুঃশাসন ও আকাশচুম্বী বৈষম্য একই সূত্রে গাথা। গণতন্ত্র, উন্নয়ন, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে দুর্নীতি হলো এককভাবে বিপজ্জনক বাধা।
তিনি সিন্ডিকেট ব্যবসা সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করতে পারলে চালের দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা করা যাবে। একই ধারাবাহিকতায় ডাল, তেল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ৩০% কমিয়ে আনা যাবে। সকল পরিবহনের যাত্রী ভাড়া ৩০% কমানো যাবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও ৩০% কমানো যাবে। উৎপাদন মুখী শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যাবে।
সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার শিক্ষানীতি ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যা করেছে তাকে কেবল নির্মম গণহত্যার সাথেই তুলনা করা যায়। শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পুতুল খেলার অনিশ্চয়তাকেও হার মানিয়েছে। পুতুল খেলাতেও এতো সিদ্ধান্তহীনতা থাকে না। পাঠ্যপুস্তকে এই অঞ্চলের সাথে ইসলামের হাজার বছরের সম্পর্ককে অস্বীকার করা হয়েছে। মুসলমানদের হানাদার হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের ইতিহাস পর্যন্ত মুছে দিয়ে সেখানে বর্বর ইহুদিদের মিথ্যা বয়ানকে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারের মতো অবৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন জিনিসকে সাধারণীকরণ করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের একমাত্র সংস্কৃতি হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।