ক্রীড়া প্রতিবেদক: আগামী ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে বিপিএলের দশম আসর। এবার খুলনা টাইগার্সের ডাগআউটে দেখা যাবে তালহাকে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে গত দুই আসরে ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেন তিনি। এবার খালেদ মাহমুদ দল বদলে দুর্দান্ত ঢাকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তালহাকেই প্রধান কোচ হিসেবে বেছে নেয় খুলনা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করানো তালহার জন্য এমনিতে নতুন নয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় ক্রিকেট লিগে দল সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে তার। তবে বিপিএলের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। প্রথমবারের মতো দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই দেখভাল করতে হবে ৩৮ বছর বয়সী এই কোচকে।
এতে অবশ্য ভড়কে যাচ্ছেন না তালহা। তিনি বললেন, বিপিএলে খালেদ মাহমুদের সঙ্গে ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে তার।
“বিপিএলে আমার প্রধান কোচ হিসেবে হয়তো অভিজ্ঞতা নেই। তবে ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে কয়েকবারই কাজ করেছি। (খালেদ মাহমুদ) সুজন ভাইয়ের সঙ্গে গতবার সহকারী কোচই ছিলাম বলা যায়। তাকে কাছ থেকে দেখেছি কীভাবে পরিকল্পনা সাজান, ক্রিকেটারদের সবকিছু বুঝিয়ে দেন। সেই অভিজ্ঞতাটা আমার আছেই।”
“এবার নতুন বিষয় হবে, এত দিন সুজন ভাই টিম মিটিং পরিচালনা করতেন, এখন আমার করতে হবে। দলের পরিকল্পনা, সব মূল সিদ্ধান্তগুলো আমার থেকে আসবে। এছাড়া বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করা, তাদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব একটা কঠিন হবে না আশা করি।”
২০০২ সালের জুলাইয়ে স্রেফ ১৬ বছর ২২৩ দিন বয়সে টেস্ট অভিষেক তালহার। একই বছরের সেপ্টেম্বর তিনি খেলেন ওয়ানডে সংস্করণেও। কিশোর বয়সেই গতি আর সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপেও জায়গা করে নেন। ওই টুর্নামেন্টে পাওয়া চোটের সুদূরপ্রসারী প্রভাবেই পরে পথ হারায় তার ক্যারিয়ার। এরপর তিনি সুযোগ পান আর একটি মাত্র টেস্টে।
২০০৪ সালে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন তালহা। এরপর চোট-আঘাতের নানা ধাক্কা সামলে ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও দশ বছর চালিয়ে যান। ত্রিশ পেরোতেই নাম লেখান কোচিংয়ে। ২০১৬ বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়।
প্রধান কোচ হিসেবে তালহার যাত্রা শুরু ঢাকা মেট্রোর হয়ে, ২০১৮ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগে। ২০১৯ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে লিস্ট ‘এ’ সংস্করণেও প্রধান কোচ হিসেবে হাতেখড়ি হয় তার। এর আগে দুই মৌসুম ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের।
খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার অল্পেই থেমে যাওয়ার আক্ষেপ প্রায় সময় শোনা গেছে তালহার কণ্ঠে। তাই নতুন পরিচয়ে যেন ক্রিকেটার হিসেবে না পাওয়া সাফল্যও নিজের করে নিতে চাইছেন তিনি।
“(কোচ হিসেবে) আমার লক্ষ্যটা আসলে অনেক বড়। এখনই লক্ষ্যের কথাটা না বলি… এটা নিজের ভেতরে থাকাই ভালো। যখন অর্জন করতে পারব… তবে লক্ষ্যটা অনেক বড়, এটুকু এখন বলতে পারি।”
“সত্যি বলতে এবার (বিপিএলে) আমি খুবই রোমাঞ্চিত। একই সঙ্গে মাথায় রাখছি যে, এটি আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। এই সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাই। আমরা চ্যাম্পিয়ন হব কি না বা কতদূর যাব, সেটা মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝা যাবে। তবে আমি আমার কাজে শতভাগ দিতে চাই।”
তালহার মতো প্রথমবার না হলেও বিপিএলে এবার প্রায় সব দলেরই কোচ দেশি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, রংপুর রাইডার্সে সোহেল ইসলাম, সিলেট স্ট্রাইকার্সে রাজিন সালেহরা থাকছেন আগের মতোই।
ঢাকার দায়িত্ব নিয়েছেন খালেদ মাহমুদ আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ডাগআউটে থাকছেন তুষার ইমরান। ফরচুন বরিশালের প্রধান কোচের ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মিজানুর রহমানের এই দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
নিজের পাশাপাশি অন্যান্য স্থানীয় কোচদের জন্যও এটিকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখেন তালহা।
“এবার বিপিএলে অনেক স্থানীয় কোচই কাজ করবেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ যদি আমরা ভালো কিছু করতে পারি। আমি প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশন্যাল লিগে কোচিং করাই কিন্তু বিপিএলটা অনেক বড় মঞ্চ আমাদের জন্য। এখানে আমাদের অনেক কিছু শেখার থাকবে, জানার থাকবে। আশা করি, এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারব।”
বিপিএল শুরুর আগে শুক্রবার অনুশীলন শুরু করবে খুলনা। বিকেএসপিতে আপাতত স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে চার দিনের প্রাথমিক পর্ব সেরে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির প্রধান কোচ।
গত আসরের দলে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়, নাসুম আহমেদ, নাহিদুল ইসলামদের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছেন এনামুল হক, আফিফ হোসেন, রুবেল হোসেনরা। বিদেশি হিসেবে যোগ দেবেন এভিন লুইস, শেই হোপ, ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা, ফাহিম আশরাফরা।
অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় কাগজে-কলমে অতটা শক্তিশালী নয় তালহার দল। তবে ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তাকে ভরসা করে নিজেদের দিনের অপেক্ষায় থাকবেন তারা।
“টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আপনার দিনে যে কারও সঙ্গে জিতে যেতে পারেন। আমি আশা করি, আমার প্লেয়াররা ভালো একটা ফর্মে থেকে সবাই নিজের কাজটা করতে পারে। আমার কাজ হবে দলের পরিবেশ ঠিক রাখা, ক্রিকেটারদের সমন্বয়-বোঝাপড়া ঠিক রাখা। আমি যদি দলের পরিবেশ ইতিবাচক রাখতে পারি, আমার বিশ্বাস যে কোনো দলকে হারাতে পারব।”
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে টুর্নামেন্ট শুরু করবে খুলনা।