নিজস্ব প্রতিবেদক: নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের জন্য আরও কিছু দিন সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসনে বিজয়ী হয়েছে দলটি। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সকালে শপথের জন্য আরও কিছু দিন সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
এদিন বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ থেকে বিজয়ী জাপা নেতা সেলিম ওসমান গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘শপথে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু আজ গেজেট হওয়ায় আমাদের দলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী কাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) শপথ। আমাদের বিজয়ী প্রার্থীরা সবাই এক জায়গায় আসতে সময় লাগছে। সে কারণে সময় চাওয়া হয়েছে। শপথ না নেওয়ার কোনও কারণ নাই।’
সেলিম ওসমান আরও বলেন, ‘আমাদের সদস্যদের কেউ ওমরাহর নিয়ত করেছেন, কেউ হয়তো অন্য কোনও কাজে। তাই আমাদের দলের পক্ষ থেকে সকালে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।’
বুধবার জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি (রবিবার) সারা দেশে একযোগে ২৯৯ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২ আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন।
এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-৩ আসনের একটি কেন্দ্রে অনিয়ম হওয়ায় ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। এই ছাড়ের পরও ১১টি আসনে বিজয়ী হন দলটির প্রার্থীরা।
বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২) নির্বাচিত হয়েছেন।
একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা (সংরক্ষিত নারী আসন বাদে) ছিল ২৩টি। সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ান স্পিকার। গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে যদি স্পিকার সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করতে না পারেন বা না করেন, তাহলে এর পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর কোনও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হবে। তবে এই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্পিকার যথার্থ কারণে তা বাড়াতে পারবেন।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার ভাষ্য, জাতীয় পার্টি শপথের জন্য সময় চাওয়ার পেছনে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ হওয়ার বিষয়টি যুক্ত।
গত দুটি সংসদ নির্বাচনে ২০টির বেশি করে আসনে জয়ী হয়ে জাতীয় পার্টি টানা দুইবার বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও এবার দলটির আসন অর্ধেকে নেমে এসেছে। জাতীয় পার্টি একাদশে আসন পেয়েছিল ২৩টি। কিন্তু এবার পেয়েছে ১১টি। অপরদিকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে এবার ৬২ জন জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার রেকর্ড হয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন।
এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যার দিক সংসদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনপ্রাপ্ত দলের চেয়ে বেশি হওয়ায় তারা সমষ্টিগতভাবে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে ভূমিকা পালন হতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অংশের একজন প্রভাবশালী নেতা মনে করছেন, জাতীয় পার্টির শপথের জন্য সময় চাওয়ার মানে হলো, বিরোধী দল হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব ও জিএম কাদেরের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়াটা নিশ্চিত করার কৌশল। বার্গেনিং করার জন্য জাতীয় পার্টি কয়েক দিন ঝুলে থাকবে বলে দাবি করেন এই নেতা।
এ বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কয়েকজন নেতাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে জিএম কাদেরের ফোন থেকে একজন জানান, তিনি রংপুরে রয়েছেন। সেখানে দলীয় বিষয়ে জরুরি বৈঠক করছেন।