নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পোশাক শ্রমিককে নিয়ে সম্প্রতি লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মনগড়া গল্প বলে অভিহিত করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এমন ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ ধরনের ভিত্তিহীন মনগড়া রিপোর্ট যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন বিজিএমই এ নেতারা
পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করায় মঙ্গলবার রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাতটি শ্রমিক ফেডারেশন। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্যা গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকরা সংসারের খরচ মেটাতে না পেরে এখন যৌনকর্মীর পথ বেছে নিয়ে নিয়েছেন। ছদ্মনাম ব্যবহার করে এক গার্মেন্টস কর্মীর কথা তুলে ধরে বলা হয়, ওই পোশাক শ্রমিক দিনের কারখানায় কাজ করে রাতে যৌন কর্মী হিসেবে অন্তত তিন জন খদ্দেরের কাছে যান। যেখান থেকে তিনি গড়ে ৬০০ টাকা পান।
প্রতিবেদনে রুবি রফিক (ছদ্মনাম) নামে ওই নারীর বিষয়ে বলা হয়, প্রতি রাতে সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়লে বাসা থেকে বের হন তিনি, চলে যান কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বাজারের দিকে। অভাবের তাড়নায় তিনি দিনে পোশাক শ্রমিক আর রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
পোশাক শ্রমিকরা বলছেন, এটা একেবারে ঢাহা মিথ্যা সংবাদ। রিপোর্টে যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে এটি যে নির্জলা মিথ্যাচার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গার্ডিয়ান বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এমন মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়ে সাতটি শ্রমিক ফেডারেশন মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিলও করেন পোশাক শ্রমিকেরা।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এবং তৈরি পোশাক শিল্প যাতে বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়, এই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এমন প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অবিলম্বে বাংলাদেশ এবং নারী শ্রমিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে গার্ডিয়ান কর্তৃপক্ষের।
শ্রমিক নেত্রী লাভলী ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেত্রী রানি খান, নাহিদুল হাসান নয়ন, বাহারানে সুলতান বাহার, মরিয়ম আক্তার প্রমুখ।
পোশাক শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রতিবেদনে রুবি নামে কথিত ওই নারী শ্রমিকের জীবনের এমন করুণ গল্প তুলে ধরা হলেও বাংলাদেশের কত শতাংশ নারী পোশাক শ্রমিকের কাজ করছেন সেটি উল্লেখ করা হয়নি। সেসব শ্রমিকদের মধ্যে কত শতাংশ নারী আর্থিক সংকটে থাকেন, তাদের মধ্যে কারা যৌনকর্ম করতে বাধ্য হচ্ছেন তারও কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়নি। এমনকি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক কোনো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও নেওয়া হয়নি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এরকম একটা সংবাদ আমাদের জন্য সত্যিই বিব্রতকর। এটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবতা বিবর্জিত ও মনগড়া । তিনি বলেন, এই নিউজের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এ ধরণের নিউজ করে এই সেক্টরে যেসব মেয়েরা কাজ করছে তাদেরকে আসলে নিচু করেছে, অপমান করেছে এবং বাংলাদেশের মহিলাদের অপমান করা হয়েছে।
বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, সংবাদে যে বিষয়বস্তু ও স্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে তার পুরোটাই বানোয়াট। কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গির চরে তো আমাদের এরকম কোনো কারখানা নেই। ফরমাল সেক্টর আছে ৪৩টা। এর বাইরে ইনফরমাল সেক্টর আছে আরও হাজার হাজার। তাহলে তারা তো কাজ করে খাচ্ছে বাংলাদেশে। তাহলে কি বাংলাদেশ পুরোটাই এভাবে চলতেছে।
তিনি বলেন, যারা এই রিপোর্টটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।