অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র আট দিন। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা শহরের ব্যস্ততম এলাকা পুরান ঢাকার শপিংমলের পাশাপাশি ফুটপাতেও জমে উঠেছে ঈদবাজার। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। তুলনামূলক অল্প দামে পছন্দ অনুযায়ী কাপড় ও প্রসাধনী কিনে বাসায় ফিরছেন তারা।
আজ সরেজমিনে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, ধূপখোলা, লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট, ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোয় দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মুখরিত ফুটপাতের দোকানগুলো। মার্কেটের তুলনায় কম দামে বাহারি ও প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়ায় ক্রেতারা ভিড় করছেন ফুটপাতের এসব দোকানে।
পুরান ঢাকা জুড়ে প্রায় প্রতিটি দোকানের চিত্র একই রকম। কেউ পরিবারের জন্য জামা-জুতা কিনছেন, আবার কেউ কসমেটিকসসহ বিভিন্ন প্রসাধনী কিনছেন। সকল বয়সী নারী-পুরুষ-শিশুদের হরেক রকমের জামা-কাপড়ের পসরা বসেছে। পুরুষদের জন্য পাওয়া যাচ্ছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, পয়েন্ট, লুঙ্গি, ফতুয়া, জুতাসহ ঘরের শৌখিন আসবাবপত্র। এছাড়াও থ্রিপিস, সালোয়ার কামিজ, টপস, বোরকা, শাড়ি ইত্যাদি পোশাকসহ আরও মিলছে ব্যাগ, নেইলপলিশ, লিপস্টিক, কাজল, চুড়ি, ফিতা, ক্লিপসহ মেয়েদের সাজার বিভিন্ন সরঞ্জাম।
ঈদ উপলক্ষে পুরান ঢাকার ফুটপাতে কেনাবেচা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। ২০ রোজার পর থেকে এখানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ফুটপাতে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত লোকজনও কেনাকাটার জন্য আসছেন। ঈদের বাজারে শিশুদের পোশাকের চাহিদা বরাবরই বেশি। ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ক্রমান্বয়ে বেচাকেনাও বাড়ছে। তবে ফুটপাতের পোশাকের দাম তুলনামূলক কম হলেও মান খারাপ ভাবার কোনো কারণ নেই। ফুটপাতে দোকান ভাড়া লাগে না বা কম লাগে বলেই তারা একই পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন।
বেচাকেনা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট বাংলাবাজার সংলগ্ন ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার আবু শাহিন। তিনি জানান, বিক্রি এখন থেকে ভালোই হচ্ছে। আমাদের কাছে যেসব পণ্য আসে সেগুলো মানে খারাপ না অথচ দাম সাধ্যের মধ্যেই থাকে৷ এক্সপোর্টের জন্য যেসব কাপড় তৈরি হয় সেগুলোতে সামান্য সমস্যা থাকলে আমাদের কাছে আসে। সেগুলোই আমরা বিক্রি করি। দৈনিক প্রায় ৭-১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারছি। আমার দোকানে শুধু ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, টি-শার্ট বিক্রি হয়। ঈদের আগে বিক্রি আরও ভালো হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
ঈদের কেনাকাটায় উচ্চবিত্তরা এগিয়ে থাকলেও একেবারে পিছিয়ে নেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। পুরান ঢাকার এসব ফুটপাতগুলোতে সব শ্রেণির ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পোশাক রাখা হয়।
সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুলের ফুটপাতে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছিলেন রিকশাচালক বক্কার আলী। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমাদের বড় দোকান থেকে কেনাকাটার সামর্থ্য নেই। একটু বেশি সময় নিয়ে খুঁজলে ফুটপাতে মোটামুটি কম দামে ভালো জিনিস কিনতে পারি। সব সময় স্ত্রী ও বাচ্চাদের নতুন কিছু কিনে দেওয়া হয় না। তাই এবার তাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে আসলাম।
ঈদের কেনাকাটায় পুরুষের চেয়ে এগিয়ে আছে নারীরা। লক্ষ্মীবাজার হলিক্রস চার্চের সামনে থেকে থ্রিপিস কিনেছিলেন সামিহা সুহা নামের মহানগর মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী। মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটার একটা অংশ এখান থেকেই করা হয়৷ এখানে অনেক সুন্দর ডিজাইনের থ্রিপিস ও প্রসাধনী পাওয়া যায়। দাম বেশি না, আবার অতো কমও না। তাই দামাদামি করে বাসার সবার জন্যই কেনাকাটা করছি।