অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: অর্থনীতে এখন যে সব সংকট আছে, সেগুলোর সমাধান সম্ভব এবং সমাধান হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, এলসি খোলার জন্য ডলারের অপর্যাপ্ততা, গ্যাস সংকটসহ কিছু সমস্যা আছে; এগুলো সবই সমাধান সম্ভব। গত শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে ২০২৪ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে সেটা বড় নয়। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বদলে দেওয়ার মতো কোনো মৌলিক পরিবর্তনও হয়নি। আগামী এক দশকে আমরা বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এখন আমাদের প্রবৃদ্ধি নেমেছে। কিন্তু আমাদের চেয়ে বেশি কমেছে চীনসহ অনেক দেশের। আমাদের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো ঠিক আছে।’
শুধু ইউরোপ আমেরিকার বাজারের ওপর নির্ভর না করে চীন, ভারত ও আফ্রিকার মতো জনবহুল দেশকে বাজার হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এসব দেশে ভোক্তা বেশি। সেজন্য প্রয়োজনীয় ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি করতে হবে।’
আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সবাইকে পীড়া দেয় সত্য। তবে এটা সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলেছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু বাকি দুনিয়ার তুলনায় সেটা অনেক ভালো অবস্থা। মূল্যস্ফীতির সমস্যা আমাদের আগেও হয়েছে, আমরা সেটা ওভারকাম করেছি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে মূল্যস্ফীতির তথ্য দিচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচনায়। আসলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়।’
প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেজন্য বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক আইনের পরিবর্তন ও সংযোজন প্রয়োজন। অন্যদিকে বৈশ্বিক বাজার থেকে আমাদের যে পরিমাণ ব্যবসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সে সহায়ক নীতি প্রয়োজন; বলেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দারিদ্র্য কমেছে। কৃষিনির্ভর দেশ থেকে আমরা শিল্প ও সেবাখাত নির্ভর হয়েছি। এখন তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপতি মূল প্রবন্ধে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অন্যতম চলনশক্তি আমাদের বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতও সমস্যাটির মুখোমুখি হচ্ছে এবং চলতি বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির গতিধারা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিনিময় এবং ডিজিটাল কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। দেশের আমদানি বিকল্প শিল্পের উন্নয়নে সিএমএসএমই-সহ স্ট্যার্ট উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তির সুবিধা সম্প্রসারণ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘রফতানি বহুমুখীকরণ, এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিং, আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এবং রেমিট্যান্স আহরণে আরও প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো যেতে পারে।’
এ ছাড়া পুঁজিবাজারে লেনদেন অবকাঠামো (ট্রেডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার) এবং অংশগ্রহণ বাড়াতে অল্টারনেটিভ ট্রেড বোর্ড (এটিবি) ব্যবহার আরও বাড়ানোর তিনি প্রস্তাব করেন।
সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতি সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে আরও গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের স্থিতিশীলতা আনায়নে সহায়ক হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, রফতানির বহুমুখীকরণ এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতি প্রণয়নের ওপর আমাদের আরও বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ট্যাক্স কোড ব্যবহারের মাধ্যমে একাউন্টিং ও রিপোর্টি প্রক্রিয়ার মধ্যকার সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’ দেশের কৃষি, ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি এবং তৈরি পোশাক খাতগুলোয় বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি খাতভিত্তিক জাতীয় বিনিয়োগ কর্মকৌশল প্রণয়ন করা জরুরি বলে জানান তিনি।